‘এসআইআর-এ আপত্তি নেই, করুক। এই ভোটার লিস্টে গরমিল থাকলে তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর করুন। কিন্তু আগে লোকসভা ভেঙে দিক। এই ভোটার তালিকার উপর ভিত্তি করে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীরও তাহলে পদত্যাগ করা উচিত। আমরা স্বাগত জানাব, গোটা দেশে এসআইআর করুন। তাহলে আমরা সকলেই পদত্যাগ করব। বিজেপি শুরু করুক, বিরোধী সমস্ত দলের সাংসদ পদত্যাগ করবে। লোকসভা ভেঙে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, নতুন করে ভোট হোক।’ মঙ্গলবার দিল্লিতে যাওয়ার আগে এমনই দাবি করে গেলেন তৃণমূলে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার ফের দলীয় সাংসদদের সঙ্গে দিল্লিতে মধ্যাহ্নভোজের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লির পথে অভিষেক। জানা গিয়েছে, নয়াদিল্লির পার্টি অফিসে হবে বৈঠক। সেখানে থাকবেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।আর সেই বৈঠকে যোগদানের আগে অভিষেকের মুখে সোমের প্রতিবাদের কথা। এদিন সাংসদ বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গতকালের মিছিল শান্তিপূর্ণ ছিল। লোকসভা, রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৩০০ জন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। এতদিন পরেও আমাদের কেন ডিজিটাল ভোটার লিস্ট দেওয়া হবে না? কেন জোর করে এসআইআর করা হবে? এই সকল প্রশ্ন নিয়েই কমিশনের সদর দফতরে মিছিল করেন বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদরা। কিন্তু ওদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশের বর্বরতা, অতিসক্রিয়তা মানুষ দেখেছেন। আমরা যখন কেন্দ্র্রীয় বঞ্চনা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম তখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পুলিশ একই ভাবে মিছিলে যোগদানকারীদের উপর চড়াও হয়েছিল। নিগ্রহ করেছিল।’
এরপরেই ‘লোকসভা ভেঙে দেওয়ার‘ প্রসঙ্গ শোনা যায় অভিষেকের মুখে। তৃণমূল সাংসদ এই প্রসঙ্গে এদিন বলেন, ‘কমিশনের সব দাবি যদি মেনে নিই, তা হলে বলতে হবে, এই ভোটার লিস্টের ভিত্তিতেই দেশে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল। এই ভোটার লিস্টের ভিত্তিতেই দেশে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তা হলে ওনারা সবার প্রথমে পদত্যাগ করুক। এই তালিকার ভিত্তিতেই বিজেপি মাস ছয়েক আগে দু–চারটি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। ওখানে পদত্যাগ করানো হোক। আমরাও পদত্যাগ করব। লোকসভা ভেঙে দিক। তারপর সারা দেশে এসআইআর করাক। নতুন তালিকায় আবার নির্বাচন হোক। আপনারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।’
পাল্টা অভিষেকের ইস্তফা প্রসঙ্গের পাল্টা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘২০০২-০৩ সালে এসআইআর-এ প্রায় ২০ লক্ষের বেশি নাম বাদ গিয়েছিল। সেই সময় বা তার আগে যে সরকার নির্বাচিত হয়েছিল, তা হলে তাদের ফেলে দেওয়া উচিত ছিল। বিশেষ ও নিবিড় ভোটার পরিমার্জন ভারতে বছর বছর ধরে হয়ে আসছে। এটা প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার হয়েছে। ভারত স্বাধীনতার পর কোনও এনআরসি রেজিস্টার তৈরি করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। তাই সময় মতো এসআইআর হয়।’
এদিন দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলা সাংসদদের উপর নিগ্রহের অভিযোগও তোলেন অভিষেক। তাঁর দাবি, সোমবারের প্রতিবাদ মিছিল পুলিশ মহিলাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। এমনকি, কমিশন বিজেপির ‘কৃতদাস’ হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি এও জানান, ‘সাংসদদের আটক করে থানায় বসিয়ে রাখল। ওরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। মানুষের প্রশ্ন নিয়ে গিয়েছিল। কমিশন তো নিরপেক্ষ, ওরা কেন উত্তর দিচ্ছে না? বিজেপি সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৃতদাস করে দিয়েছে।’ পাশাপাশি, আগের মতোই বাংলায় এসআইআর-এ একজনের নাম বাদ গেলে এক লক্ষ লোক নিয়ে কমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তাঁর সংযোজন, ‘বিজেপি ভাল করে জানে বাংলার মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে এদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। আর দেশে এতই যদি ভুয়ো ভোটার থাকে, তা হলে নির্বাচন হল কেন। তৎকালীন চিফ নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হোক।’