বিরোধীদের কমিশন অভিযানে তোলপাড়

IMG-20250811-WA0121

এসআইআর ইস্যুতে বিরোধীদের কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজধানী দিল্লি। সোমবার এসআইআর ইস্যু ও ভোট চুরির অভিযোগকে সামনে রেখে দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি।লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে সংসদের মকর দ্বার থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তখনই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের। ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাধা পেয়ে সেখানেই অবস্থানে বসে পড়েছিলেন রাহুল গান্ধি, অখিলেশ যাদব, মহুয়া মৈত্রেরা। পরে পুলিশ সব সাংসদকে আটক করে বাসে তোলে। দুপুর ৩টে নাগাদ আটক সাংসদদের মুক্তি দেয় দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। তৃণমূল-সহ বেশ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ মহিলা সাংসদদের উপর বলপ্রয়োগ করেছে, চুল ধরে টেনেছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগ। দিল্লি পুলিশ মিছিল আটকাতেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় বিরোধীদের। অসুস্থ আরামবাগের সাংসদকে সাহায্য করেন রাহুল-সহ অন্যরা। এর পাশাপাশি বাসের মধ্যে মধ্যে জ্ঞান হারান তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এসআইআর-এর কারণে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। বিহারের ভোট চলতি বছরের শেষে। বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অসম, তামিলনাড়ুতেও বিধানসভা ভোট। বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশনকে বিজেপি ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, ভোট চুরি হচ্ছে। যদিও তা উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। এসআইআর নিয়ে মামলাও হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত এসআইআর প্রক্রিয়ায় এখনও কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। তবে কমিশনকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। মামলার শুনানি চলছে। এই আবহেই সোমবার বিরোধীরা কমিশন অভিযানের ডাক দেয়। আর সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই উত্তাল হয় রাজধানী। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকালেই সংসদ ভবনে জড়ো হন বিরোধী সাংসদরা। মিছিল শুরু হতেই সংসদ ভবনের সামনে পথ আটকায় দিল্লি পুলিশ। ব্যারিকেডে আটকে দেওয়া হয় রাহুল গান্ধি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, অখিলেশ যাদব, ডিম্পল যাদব, মহুয়া মৈত্র, ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ বিরোধী সাংসদদের। তার পরেই শুরু হয় হইচই। ব্যারিকেডের উপরে উঠে পড়েন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অখিলেশ যাদব, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সুস্মিতা দেবরা। তখনই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।


সোমবার সকাল ১১টায় সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই এসআইআর-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধী সাংসদেরা। হইচইয়ের জেরে সংসদের দুই কক্ষেই দুপুর ২টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়। তার পর মকর দ্বারের সামনে জড়ো হন সকলে। সেখান থেকে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতর, নির্বাচন সদনের উদ্দেশে মিছিল শুরু হয়। মিছিলে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, এসপি, আরজেডি-সহ বিরোধী জোটের সব সদস্য দলের সাংসদরাই অংশ নেন। মিছিলে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, শরদ পওয়ারের মতো প্রবীণ সাংসদেরাও। বর্তমানে ‘ইন্ডিয়া’-তে না-থাকলেও কর্মসূচিতে শামিল হয়েছিল আপও। বিরোধীদের নির্বাচন সদন অভিযান থেকে কমিশনের বিরুদ্ধে নানা ভাষায় স্লোগান ওঠে। দেখা যায় নানা ভাষায় লেখা পোস্টার এবং ব্যানারও। কমবেশি প্রতিটি পোস্টারেই ছিল ‘ভোট চুরি’ বন্ধ করার দাবি। কোনও কোনও পোস্টারে আবার এসআইআর-এর বিরুদ্ধে তোপ দাগা হয়। তৃণমূল সাংসদদের হাতে থাকা ব্যানার এবং পোস্টারে নির্বাচন কমিশনকে বিঁধে লেখা হয়েছিল, ‘চুপি চুপি ভোটের কারচুপি’। পুলিশ মিছিল আটকাতেই ব্যারিকেডের উপর উঠে পড়েন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেবরা। অখিলেশ ব্যারিকেড টপকে অপর প্রান্তে চলে যান। বাকি সাংসদেরা রাজপথেই বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগান ওঠে ‘মোদী সরকার হায় হায়’, ‘এসআইআর বাতিল করো’। দলীয় সাংসদদের সঙ্গে স্লোগান দিতে দেখা যায় প্রিয়ঙ্কা গান্ধিকেও। দিল্লি পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়া পেয়েই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন রাহুল গান্ধি। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, “ওরা আমাদের আটক করতে পারে। কিন্তু ভারতের কণ্ঠস্বরকে কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করতে পারবে না। আমরা রাজনীতির জন্য লড়াই করছি না। আমরা আপনার ভোট, আপনার অধিকারকে সুরক্ষিত করতে এই লড়াইটা করছি।” সাংসদদের প্রথমে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করে পুলিশ। তার পর তাঁদের প্রত্যেককে আটক করে বাসে তোলা হয়। বাস থেকেও স্লোগান দিতে থাকেন সাংসদেরা। রাহুল বলেন, “এটা কোনও রাজনৈতিক লড়াই নয়, সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা চাই।” পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন মহুয়া, মিতালি, এসপি-র এক সাংসদ। মহুয়া কিছু সময়ের জন্য সংজ্ঞা হারান। পরে খানিকটা ধাতস্থ হন তিনি। জল এগিয়ে দেন রাহুল এবং অন্য সাংসদেরা। মিতালিকে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সাংসদেরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনেই তাঁদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল। সব মিলিয়ে এদিন ইন্ডিয়া জোটের ঐক্যের ছবিই ধরা পড়ে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement