এসআইআর নিয়ে ফের ক্ষোভপ্রকাশ

IMG-20250716-WA0128

না জেনে ফর্ম ফিলাপ নয়, বার্তা মমতার

আগামী বছরই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিহারের মডেলে এ রাজ্যেও ভোটার তালিকা সংশোধনের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা আনার নামে কমিশন আসলে ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গত কয়েকদিন ধরে এই ইস্যুতে কমিশনকে নিশানা করছেন। এবার এই বিষয়ে বাংলার মানুষকে সতর্ক করলেন তিনি।তাঁর বার্তা, না জেনে ফর্ম ফিলাপ করবেন না। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মঞ্চ থেকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যবাসীকে মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, ‘না জেনে ফর্ম ফিল-আপ করবেন না। ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। সব দেবেন, নিজের ঠিকানা দেবেন না।’ নির্বাচন কমিশন বিহারে “স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা এসআইআর-এর ভোটার তালিকা সংশোধন করার কাজ করছে। সেই মডেলেই বাংলায় ভোটার তালিকা সংশোধন করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। কমিশনের এই উদ্যোগ নিয়ে নিয়ে তিনি যে ক্ষুব্ধ, মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার আরও একবার বুঝিয়ে দেন ঝাড়গ্রামের সভা থেকে। একইসঙ্গে বাংলা ভাষা নিয়েও যে তাঁর আন্দোলন চলবে তা আরও একবার স্পষ্ট করে দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘কেউ যদি বলে ফর্ম ফিলাপ করুন আমরা কিছু দেব। না জেনে করবেন না। আপনার ডিটেলস নিয়ে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। তার পরেই বলবে এই নাও এনআরসির নোটিস।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা মানব না। আমরা চাই আমাদের আদিবাসী, তফসিলি, দলিত, হিন্দু, মুসলিম হোক। আর আমার কন্যাশ্রীই হোক, সকলের নাম ভোটার লিস্টে তুলতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি না এটা আমার বলা ঠিক কিনা, তবে আমি বলছি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু এপিক কার্ড থাকলেই আর হবে না, নতুন করে নাম তোলার চক্রান্ত চলছে। কারণ নিয়ম পাল্টে দিয়েছে। ভোটার লিস্টে নাম আছে কিনা, আগে তালিকা দেখলেই হবে না। নতুন করে নাম তোলার আবার চক্রান্ত চলছে। আগের ভোটার লিস্টে নাম থাকলে হবে না। নতুন ভোটার লিস্টে গিয়ে ক্রস চেক করতে হবে। ২০০২ সালের আগে যাদের জন্ম বা ২০০২ সালে যাদের ভোটার লিস্টে নাম উঠেছে, তাদের বলছে বাবা মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট আনতে হবে। তখন মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষের জন্মের সার্টিফিকেট থাকত। তাই ২০০৪-এর পর যাদের জন্ম তাদের বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট থাকা সম্ভব কি!’’ তিনি আরও বলেন, “যাঁরা বাংলাদেশ থেকে আইন মেনে এসেছেন তাঁরা এদেশের নাগরিক। অনুপ্রবেশকারী ইস্যু আমাদের হাতে নেই। কেন বলছেন? চিঠি পাঠাচ্ছে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মতুয়াদের। আমাদের বাংলার মানুষরা লড়াই করল। সংগ্রাম করল। আর বিদেশি? তোমরা একা স্বদেশি? এই জিনিস আমরা বরদাস্ত করব না। মানব না। রুখে দাঁড়াবেন।” কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরাও তো হোম ডেলিভারি, আমাদের স্কুলের সার্টিফিকেটই আছে শুধু। ওদের সার্টিফিকেট আছে তো? যাঁরা আইন করছে তাঁদের আছে তো? ওঁরা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছেন, খেটে খাওয়া মানুষের কথা বুঝবেন কী করে!” আমি জিজ্ঞাসা করছি, যাঁরা আইন করছেন, তাঁদের মা বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে তো? ’’মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কালকে আমার দুই অফিসারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সাসপেন্ড করার কথা বলছে। আমরা বলি, তোমার নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়েছে? কোন আইনের বলে তুমি নোটিস পাঠাচ্ছ? সাসপেন্ড করছ। আর বলে দিচ্ছ, এফআইআর করতে হবে। হবে না। আমি কারও পানিশমেন্ট হতে দেব না। এটা মাথায় রাখবেন।” ভিনরাজ্যে বাঙালি হেনস্থার বিরুদ্ধেও এদিন সুর চড়াতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, “প্রত্যেক মানুষের একটা ভাষা আছে। ভাষা তাঁর সম্মান, গর্ব। আর বলছে বাংলা ভাষাই নেই। এদের কী বলব বলুন? নীরবে বুকটা ফেটে যায়। ওরা বাজে কথা বলে আমরা বলতে পারি না। আমরা মর্মাহত, শোকাহত। মানুষের উপর অত্যাচার হচ্ছে বাংলার। ২ হাজারের বেশি ফিরিয়ে এনেছি। গুরগাঁও, অসম, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে অত্যাচার করছে। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভোটের আগে বলবে টাকা নাও আর ভোট দাও। তুমি টাকা দেওয়ার কে? ওটা মাটির টাকা, তোমার টাকা নয়’। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘’যখন মানুষ বিপদে পড়ে ভেদাভেদ করে না। ভোটার লিস্ট আর ভাষার সম্মান কেউ ছাড়বেন না। মতুয়াদের উপর মুম্বইতে অত্যাচার হচ্ছে। মুম্বইতে একজনকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করে বস্তায় তোলা হয়েছে। নিজের ভাষায় কথা বলাটা অপরাধ?”

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement