সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত

IMG-20250804-WA0117

এভাবেও ফিরে আসা যায়। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ওভালে অবিশ্বাস্য জয় পেল টিম ইন্ডিয়া। আর এই জয়ের সুবাদে সিরিজ ড্র করল ভারত। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। ভারতের দরকার ছিল ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত সোমবার ইংল্যান্ডকে ছারখার করে ৬ রানে পঞ্চম টেস্ট ম্যাচ জিতে নিল ভারত।৩৬৭ রানে শেষ হলো ইংল্যান্ডের ইনিংস। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে জয় পাওয়ায় ২-২ ফলে শেষ হলো অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফি। শেষ টেস্ট জেতা খুব সহজ ছিল না। সোমবার সেই কঠিন কাজটাই সহজ করে দেখান মহম্মদ সিরাজ। প্রায় ১২০০ বল করেছেন। সবচেয়ে বেশি ২৫টা উইকেট নিয়েছেন। দু’দল মিলিয়ে তিনিই একমাত্র পেসার যিনি পাঁচটা ম্যাচই খেলেছেন। শেষ দিন যখন একটা একটা রান করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে ইংল্যান্ড তখনও হাল ছাড়েননি তিনি।
মহম্মদ সিরাজ এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে বল হাতে আগুন ঝরালেন। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই জেমি স্মিথকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দেন মহম্মদ সিরাজ। চতুর্থ ওভারে ফের সাফল্য সিরাজের। ৯ রান করে জেমি ওভার্টন ফেরেন এলবিডব্লুউ হয়ে। তখন জয়ের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল ভারত। জশ টাংকে ক্লিন বোল্ড করেন প্রসিধ কৃষ্ণ। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল আর ১৭ রান। ফিনিশিং টাচটা আসে সিরাজের হাত থেকেই। গাস অ্যাটকিনসনকে ১৭ রানে বোল্ড করেন তিনি। ৩৬৭ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেন সিরাজ। এই ম্যাচে নিয়েছেন মোট ৯ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ১-৩ সিরিজ়ে হারের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ২-২ সিরিজ় ড্র করলেন শুভমন গিলেরা। ইংল্যান্ডের মাটিতে পর পর দুটো সিরিজ় ২-২ ড্র করল ভারত। কোচ হিসাবে টেস্ট সিরিজ় হারের লজ্জা থেকেও বাঁচলেন গৌতম গম্ভীর। ওভালে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হওয়ার আগে এগিয়ে ছিল ভারত। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল আরও ৩২৪ রান। ভারতের প্রয়োজন ছিল ৮ উইকেট। সবুজ উইকেটে ৩২৪ রান কম নয়। দিনের শুরুটাও খারাপ হয়নি ভারতের। প্রথম সেশনে বেন ডাকেট ও ওলি পোপ আউট হয়ে যান। তখন ইংল্যান্ডের রান ১০৬। অর্থাৎ, জিততে দরকার আরও ২৬৮ রান। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও মহম্মদ সিরাজ ছন্দে ছিলেন। সেই সময় আর একটা উইকেট পড়লে খেলার রাশ অনেকটাই ভারতের হাতে চলে আসত। সুযোগ তৈরিও করেছিলেন প্রসিদ্ধ। তাঁর একটা বলে পুল মারার চেষ্টা করেন ব্রুক। ব্যাটের কানায় লেগে বল হাওয়ায় ওঠে। প্রসিদ্ধ তখনই দু’হাত উপরে তোলেন। উল্লাস শুরুও করে দিয়েছিলেন তিনি। বলের নীচে দাঁড়িয়ে সিরাজ। বাউন্ডারির থেকে অনেকটাই আগে ছিলেন তিনি। কিন্তু সিরাজ বুঝতেই পারেননি বাউন্ডারির দড়ি ঠিক কোথায়। তিনি ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকেন। ক্যাচ ধরে আরও এক পা পিছোন তিনি। তাতে বাউন্ডারির বাইরে চলে যান সিরাজ। এক বার জীবন পাওয়ার পর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করলেন ব্রুক। একের পর এক বড় শট মারার শুরু করলেন তিনি। এই প্রতি-আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলল ভারত। দেখে মনে হচ্ছিল, সিরাজের ভুলের খেসারত দিতে হবে ভারতকে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। গোটা সিরিজ়ে বুক চিতিয়ে লড়েছেন সিরাজ। দু’দলের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওভার বল করেছেন। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন। যখনই মাঠে নেমেছেন, নিজের ১০০ নয়, ২০০ শতাংশ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও ওভালে হারলে হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারতেন না ভারতীয় বোলার। ব্রুকের ক্যাচটা ধরতে পারলে অনেক আগেই ম্যাচটা জিতে যেতে পারত ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি পাবেন সিরাজ। শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। সিরিজ ড্রয়ের পর কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন গম্ভীর। ভারতের কোচ হিসাবে চারটে টেস্ট সিরিজ় খেলেছেন তিনি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে হারিয়ে শুরু করেছিলেন। তার পর শুধুই ব্যর্থতা। গত বছর ঘরের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে তিন টেস্টের সিরিজ়ে চুনকাম হয়েছেন। তার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ১-৩ সিরিজ় হেরেছেন। সেই সঙ্গে গত টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। তবে ওভালের টেস্ট ম্যাচে জয় অনেকটাই স্বস্তি দেবে গৌতম গম্ভীরকে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement