মথুরা: মথুরা-কোটা সেকশনে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘কবচ ৪.০’ কমিশন – দিল্লি-মুম্বই রুটে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। রেকর্ড সময়ে দিল্লি-মুম্বই রুটের ব্যস্ত মথুরা-কোটা সেকশনে কবচ ৪.০ চালু হওয়া এক বিশাল সাফল্য জানালেনরেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেল সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে, ভারতীয় রেল মথুরা-কোটা সেকশনে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘কবচ ৪.০’ সিস্টেম চালু করেছে। দিল্লি-মুম্বই উচ্চ ঘনত্বের রুটে এটি একটি বড় সাফল্য বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবতিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ভিশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতীয় রেল সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব প্রযুক্তিতে ‘কবচ’ স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা ডিজাইন, উন্নয়ন ও উৎপাদন করেছে। এটি একটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা, যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আরডিএসও দ্বারা অনুমোদিত হয়।তিনি আরও জানান, উন্নত দেশগুলিতে যেখানে ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে ২০-৩০ বছর লেগেছে, সেখানে ভারত মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই কবচ ৪.০ মথুরা-কোটা সেকশনে সফলভাবে কমিশন করেছে এটি একটি বিশাল অর্জন।গত ৬০ বছরে স্বাধীনতার পর দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক মানের ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়নি। ভারতীয় রেল বর্তমানে দেশজুড়ে বিভিন্ন রুটে কবচ ৪.০ ছয় বছরের মধ্যে চালু করার পরিকল্পনা করছে। কবচ-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:কবচ একটি দেশীয়ভাবে নির্মিত ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা দুর্ঘটনা রোধে ট্রেনের গতি নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সেফটি ইন্ট্রিগ্রিটি লেভেল ৪ অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে যা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা স্তর। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং প্রায় ৩ বছর ধরে ব্যাপকভাবে এটি পরীক্ষা করা হয়। ২০১৮ সালে সাউথ সেন্ট্রাল রেলওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার পর প্রথম অপারেশনাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ‘কবচ ৪.০’ উন্নয়ন করা হয়, যা ২০২৫ সালের মে মাসে ১৬০ কিমি/ঘণ্টা গতির জন্য অনুমোদিত হয়।কবচ-এর সব উপাদান ভারতেই তৈরি হচ্ছে।কবচ ৪.০-র সুবিধাসমূহ:ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্রেক প্রয়োগের মাধ্যমে চালকদের সাহায্য করে।কুয়াশার মতো কম দৃশ্যমানতার পরিস্থিতিতেও চালকদের কেবিনের ভিতরে থাকা ড্যাশবোর্ডে সংকেতের তথ্য দেখা যাবে, বাইরের সংকেত খুঁজে বের করার দরকার পড়বে না। আরও কিছু উদ্যোগ:ইতিমধ্যে ৩০,০০০-এরও বেশি কর্মীকে কবচ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আইআরআইএসইটি (ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ইনস্টিটিউট অফ সিগন্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস) এআইসিটিই অনুমোদিত ১৭টি প্রকৌশল কলেজ, প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে, যাতে বিটেক পাঠ্যক্রমে কবচ অন্তর্ভুক্ত করা যায়।অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রতিশ্রুতি:রেলওয়ের বিভিন্ন সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কবচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রতি বছর ১ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগে সমর্থিত।এই পদক্ষেপ ভারতের রেল ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে এক যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কবচ-এর জটিলতা কবচ একটি অত্যন্ত জটিল সিস্টেম। এটি কমিশন করা একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিকম সংস্থা স্থাপন করার সমতুল্য। এর অন্তর্গত বিভিন্ন উপ-ব্যবস্থাসমূহ হলো: ১. আরএফআইডি ট্যাগস:প্রতিটি ১ কিমি অন্তর ট্র্যাকের পুরো দৈর্ঘ্যজুড়ে আরএফআইডি ট্যাগ স্থাপন করা হয়। প্রতিটি সিগনালেও ট্যাগ বসানো হয়। এই ট্যাগগুলি ট্রেনের সঠিক অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে।(ট্র্যাকে আরএফআইডি ট্যাগ স্থাপন) ২. টেলিকম টাওয়ার:প্রতি কয়েক কিলোমিটার অন্তর ট্র্যাক বরাবর সম্পূর্ণ টেলিকম টাওয়ার, অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহসহ স্থাপন করা হয়। লোকোমোটিভে বসানো কবচ সিস্টেম এবং স্টেশনে বসানো কবচ কন্ট্রোলারগুলো এই টাওয়ারগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করে। এটি যেন একটি টেলিকম কোম্পানির পুরো নেটওয়ার্ক স্থাপন করার মতো।(টেলিকম টাওয়ার স্থাপন) ৩. লোকো কবচ:এটি ট্র্যাকে বসানো আরএফআইডি ট্যাগের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং প্রাপ্ত তথ্য টেলিকম টাওয়ারে পাঠায়, সেইসঙ্গে স্টেশন কবচ থেকে রেডিও তথ্য গ্রহণ করে। লোকো কবচ লোকোমোটিভের ব্রেকিং সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং জরুরি অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেক প্রয়োগ করে।(লোকো কবচ ইনস্টলেশন) ৪. স্টেশন কবচ:প্রতিটি স্টেশন এবং ব্লক সেকশনে এটি বসানো হয়। এটি লোকো কবচ এবং সিগনালিং সিস্টেম থেকে তথ্য নিয়ে ট্রেনের নিরাপদ গতির দিকনির্দেশ প্রদান করে। ৫. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল :ট্র্যাক বরাবর অপটিক্যাল ফাইবার বিছানো হয়েছে যা উচ্চ-গতির ডেটা আদান-প্রদানে সমস্ত সিস্টেমকে সংযুক্ত করে। ৬. সিগনালিং সিস্টেম:এই সিস্টেমটি লোকো কবচ, স্টেশন কবচ, টেলিকম টাওয়ার ইত্যাদির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।(স্টেশন ম্যানেজারের অপারেশন প্যানেল)এই সব সিস্টেম স্থাপন, পরীক্ষা ও সার্টিফাই করতে হয় যাত্রী ও মালগাড়ির ভারী চলাচল চলমান থাকাকালীন অর্থাৎ রেল চলাচল বিঘ্ন না ঘটিয়ে।কবচ-এর অগ্রগতি- ক্র. কাজ অগ্রগতি:
১ অপটিক্যাল ফাইবার বিছানো ৫,৮৫৬ কিমি ২. টেলিকম টাওয়ার স্থাপন ৬১৯ ৩. স্টেশনে কবচ ইনস্টল ৭০৮ ৪. লোকোমোটিভে কবচ ইনস্টল ১,১০৭ ৫. ট্র্যাকসাইড সরঞ্জাম ইনস্টল ৪,০০১ রেল কিমি ভারতীয় রেলের সুরক্ষা বিনিয়োগ:ভারতীয় রেল প্রতি বছর ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে বিভিন্ন সুরক্ষা কার্যক্রমে। কবচ এই সুরক্ষা প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।কবচ-এর উন্নয়ন এবং দ্রুত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ভারতীয় রেলের যাত্রী ও ট্রেন সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।