কল্যাণের আচরণে ক্ষুব্ধ বিচারপতি, ছেড়ে দিতে চাইলেন মামলাও

IMG-20250707-WA0138

বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় অভিযুক্ত দুই পুলিশ অফিসার রিনা সরকার ও দীপঙ্কর দেবনাথের জামিন মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়ালেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জেরে মামলা থেকেই সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি। শুক্রবার আদালতে বিচারপতি ও আদালত সম্পর্কে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ যে মন্তব্য করেছেন, তাতেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। এর ফলে জামিন ভাগ্য অধরা রয়ে গেল ইন্সপেক্টর ও হোমগার্ডের। এরপর নিয়ম অনুযায়ী মামলার ফাইল যাবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে। শুনানির জন্য বেঞ্চ তৈরি করে দেবেন তিনি।
ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় এক পুলিশকর্মী এবং এক হোমগার্ডের গ্রেফতারির ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবারের মধ্যে সিবিআইকে ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। শুক্রবার এই মামলায় রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করে আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, এই দুই পুলিশ আধিকারিককে সিবিআই প্রথমে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছিল, পরে হঠাৎ চূড়ান্ত চার্জশিটে তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ ছাড়াই তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, যা আইনসঙ্গত নয়। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষও সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘চার বছর ধরে সমন জারি হওয়া সত্ত্বেও কোনও গ্রেফতার হয়নি। হঠাৎ করে সমন জারি করে গ্রেফতার করা হল কেন?’ সিবিআইয়ের আইনজীবী ময়ূখ মুখোপাধ্যায় পাল্টা সওয়ালে বলেন, ‘অভিযুক্তরা সমনের জবাব দিয়েছিলেন এবং জামিনের আবেদন করেছিলেন, যা নিম্ন আদালত খারিজ করে।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘এই মামলায় রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। পুলিশের একাংশ ও রাজনীতির মধ্যে যোগসূত্র ছিল।’ তিনি আরও দাবি করেন, এটি কলকাতায় ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা, যার তদন্ত আদালতের নির্দেশে পরে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আদালতের কাছে অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি জানান। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ জানান, ‘এই মামলা আজই শেষ করে রায় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এর মধ্যে অনেক আইনি দিক আছে। ফলে এই শুনানিতে সময় লাগবে। আমি আগামী ২ সপ্তাহ এখানে নেই। মামলার শুনানির জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে আদেশ দেওয়া সম্ভব নয়।’ তখনই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেন, অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিতে। তবে কল্য়াণের আর্জি প্রত্যাখ্যান করে আদালত। এরপরই কল্যাণ বলেন জামিনের জন্য আমাদের বিচারপতিদের কৃপার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এটাই দুর্ভাগ্য।’ এই কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। সেই আর্জি তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ’অনেকক্ষণ ধরে আদালত সম্পর্কে নানা মন্তব্য করছেন। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আপনার লেকচার আদালত শুনবে না। আমি এই মামলা ছেড়ে দিচ্ছি। অন্য কোনও বেঞ্চে যান।’ এরপর তিনি মামলাটি ফেরত পাঠান সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, বিচারপতি আগামী দুই সপ্তাহ ছুটিতে থাকায় এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এখনও স্থির হয়নি। ফলে জামিনের আর্জি নিয়েই আপাতত অনিশ্চয়তায় রইলেন রিনা সরকার ও দীপঙ্কর দেবনাথ।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement