“বঙ্গ রাইস কনক্লেভ”-এ ধানচাষের টেকসই ভবিষ্যতের সন্ধানে একধাপ এগিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ

IMG-20250725-WA0102

কলকাতা: ধান উৎপাদন, ফসল সংরক্ষণ ও স্মার্ট সেচ ব্যবস্থার প্রসারে এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নিল ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি)। শুক্রবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল “বঙ্গ রাইস কনক্লেভ”, যেখানে অংশগ্রহণ করলেন রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কৃষি গবেষক, রাইস মিল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের ধানচাষ ব্যবস্থাকে আরও টেকসই, বিজ্ঞানভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক বাজারমুখী করে তোলা।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি দফতরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, “পশ্চিমবঙ্গ কৃষি উদ্ভাবন ও কৃষক কল্যাণে দেশের প্রথম সারির রাজ্য। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য আমরা ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকিতে কৃষিযন্ত্র কেনার সুযোগ দিচ্ছি। ইতিমধ্যে রাজ্যে ২,৫০০টি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার চালু হয়েছে।মন্ত্রী আরও জানান, উপকূলবর্তী এলাকার কৃষকদের জন্য ‘নোনা স্বর্ণ’ নামে একটি নতুন ধানের জাত তৈরি করা হয়েছে, যা প্লাবন সহিষ্ণু। একইসঙ্গে তিনি বলেন, গবিন্দভোগ ধান আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও খাদ্য সরবরাহ দফতর একযোগে কাজ করছে যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো যায়।বিশেষ অতিথি শ্রী অভিজিৎ মৈত্র, বিশেষ সচিব, খাদ্য সরবরাহ দফতর, জানান, “পশ্চিমবঙ্গ একটি ডিসেন্ট্রালাইজড প্যাডি প্রোকিওরমেন্ট স্টেট। আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করি। এই বছর -এ ৫৬.৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে সর্বাধিক। এমপিএস বেড়ে ২৩৬৯ হয়েছে এবং উপকৃত কৃষকের সংখ্যা ১৬.৪৩ লক্ষে পৌঁছেছে।
ড. রাজীব সিং, ডিরেক্টর জেনারেল, আইসিসি, বলেন, “এই কনক্লেভ একটি কর্মপরিকল্পনার সূচনা। উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিকেই আমরা নজর দিচ্ছি। বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী জয় কুমার মারোতি বলেন, “ধান শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মিলার, কৃষক, শ্রমিক ও উদ্যোক্তারা রাজ্যের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা এগোচ্ছি, তবে নিরাপত্তা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জামের অভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন দরকার।পশ্চিমবঙ্গ রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী মনোজ কে ফোগলা বলেন, “আমরা আগুন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মানতে প্রস্তুত, তবে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সহজলভ্য নয়। রাজ্যে ডেটা-নির্ভর কৃষি মডেল ও আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, প্রিসিশন ফার্মিং চালু করা হলে কৃষকদের উপকার হবে।অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রী শিবেশ কুমার ঝা (চিফ জেনারেল ম্যানেজার, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক), শ্রী মাধব অধিকারী (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, কোরোম্যান্ডেল ইন্টারন্যাশনাল), এবং শ্রী সঞ্জয় সিনহা (জেনারেল ম্যানেজার, সোনা মেশিনারি লিমিটেড)।উপসংহারে বলা যায়, এই কনক্লেভ কৃষক, প্রশাসন ও শিল্প মহলের মধ্যে সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠল। ধান উৎপাদনের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের কৃষিক্ষেত্রকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement