কোচবিহার: দিল্লির বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনিতে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দাদের। এই বাসিন্দাদের অধিকাংশ দিনহাটা ও কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকার। শ্রমিকের কাজে এরা বছরের পর বছর ধরে দিল্লিতে রয়েছেন। দিন কয়েক আগে এই ঘটনার কিছুদিন আগে নাজিরহাটে ফিরেছেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে গত দুদিন আগে সেখানে জয় হিন্দ কলোনিতে বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ায় প্রচন্ড এই গরমের মধ্যে জিনিসপত্র নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন এই বাসিন্দারা। কয়েকদিন আগে ঈদের সময় অনেকেই বাড়ি এলেও ইতিমধ্যে এই ঘটনায় তাড়াহুড়ো করে তারা অনেকেই ফিরতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দুই এক জন খবর পেয়েই চলে গিয়েছেন সেখানে।সেখানে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্রমিকের কাজ করা দিনহাটার নাজিরহাটের ছোট গাড়লঝরার মোজাম্মেল মণ্ডল জানিয়েছেন, ঈদের জন্য বাড়িতে এসেছিলাম। তারপরে হঠাৎ শুনি আমরা যে কলোনিতে রয়েছি সেখানে বিদ্যুত সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে কেটে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি কয়েক দিনের জন্য দিনহাটা এলেও আমার ভাই মোস্তাফা মণ্ডল, দুধবর মণ্ডল, দুই বোন শাহিনা বিবি ও শাহিনা বিবি তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেখানেই রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণদিত ভাবে বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ায় কলোনির বাসিন্দারা দিল্লির এই গরমে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই আমি সেখানে যাব।সানাউল্লাহ মিয়া জানিয়েছেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করি। আমরা বসন্ত কুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনিতে বসবাস করছি। হঠাৎ করে সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ায় শিশু মহিলা সহ সকলেই প্রচন্ড গরমের মধ্যে কষ্টে রয়েছে। ১০ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকলে খুব কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। এই অবস্থায় পরিবারের অন্যান্যদেরকে রেখেই ২-১ দিনের মধ্যেই দিল্লি চলে যাব। উদ্দেশ্যপ্রণীত হবে দিল্লি সরকার আমাদেরকে চক্রান্ত করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় দিনহাটা ছাড়াও কোচবিহার জেলার বিভিন্ন এলাকার ছয় হাজারের বেশি বাসিন্দা বসবাস করছে। এরা অধিকাংশই ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে শ্রমিকের কাজ করে। এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ায় এদের আত্মীয় পরিজনরা দিনহাটার সীমান্ত গ্রামেও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ছোট গাড়লঝড়ার রফিকুল শেখ জানিয়েছেন, আগে ভাড়া ছিলাম। ২০১৪ সালে ওই এলাকা আগুন লাগার পর পুরো এলাকায় আমরাই বসবাস করছি। তখন থেকে আর ভাড়া দিতে হয় না। এখন চক্রান্ত শুরু হয়েছে। বসন্ত কুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনিতে বসবাস করা দিনহাটার নাজিরহাটের নুরুল হক বলেন,”তিন দিন ধরে যে কি কষ্টে রয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না। এলাকাতেই মন্দির এবং মসজিদ রয়েছে। সেখান থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ গোটা বসন্ত কুঞ্জের ঘরে ঘরে রয়েছে। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ কেটে দিয়ে চক্রান্ত করে আমাদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।নুরুলের ভাই আমির হোসেন, মা আবিরণ বেওয়া দিনহাটার নাজিরহাটের ছোট গারুলঝরা গ্রামেই বসবাস করেন। বসন্ত কুঞ্জের ঘটনায় পরিবারের লোকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ায় দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবিরন।ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রউফ বলেন,”১৯৯৮ সাল থেকে দিল্লিতে বসবাসকারী বাংলার মানুষদের বিশেষ করে কোচবিহারের লোকদের যারা দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করে আসছে তাদেরকে নানা সময় বাংলাদেশী বলে হয়রান করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই জারি রেখেছি। যন্তর মন্তরে আমরা বিক্ষোভ দেখিয়েছি। অনর্থকভাবে এ রাজ্যের বাসিন্দাদেরকে হয়রানি করা দিল্লী পুলিশের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে ফরওয়ার্ড ব্লক আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এই বাসিন্দাদের কেউ ২৫ বছর কেউ আরো বেশি সময় ধরে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করছে। তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে বিজেপি সরকার আসার পর তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে দিল্লির ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব এবং দলের আইনজীবী যারা রয়েছে তারাও সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করে চলছে।