নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদই ‘দাগিরা’

1750101123802

ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেল রাজ্য ও স্কুল সার্ভিস কমিশন।দাগিদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া নিয়ে সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদই পড়লেন ‘দাগি’ বা চিহ্নিত অযোগ্যেরা।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, ‘দাগি’ অযোগ্যেরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ইতিমধ্যে ‘দাগি’ যাঁরা আবেদন জমা দিয়েছেন, তা-ও বাতিল করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ বা ‘দাগি’রা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। সোমবার এমনই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য।কিন্তু সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। অযোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে ডিভিশন বেঞ্চেও বুধবার প্রশ্নের মুখে পড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন। ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন ছিল, এসএসসি কেন ‘দাগি’দের পাশে দাঁড়াচ্ছে? আর বৃহস্পতিবার সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রেখে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, তাঁরা সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ে হস্তক্ষেপ করবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেল বাতিল হয়। চাকরি যায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর।শিক্ষাকর্মীর। তবে রাজ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্য ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সর্বোচ্চ আদালত এও জানিয়ে দিয়েছিল, ৩১ মে-র মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সেইমতো নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এসএসসি। সেখানে প্রায় ৪৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা। সেই মামলার শুনানিতেই সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য নির্দেশ দেন, কোনও ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থী যদি ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন, সেই আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে। তারপরেই সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখেছে। এসএসসি-র নিয়োগবিজ্ঞপ্তি নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল হাই কোর্টে। সেই সব মামলায় গত সোমবার উচ্চ আদালতের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন নিয়োগে চিহ্নিত ‘দাগি’দের সুযোগ দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে কোনও ‘দাগি’ প্রার্থী আবেদন করে থাকলে তা-ও বাতিল করতে হবে। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে এসএসসি ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য ও স্কুল সার্ভিস কমিশন।বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের সেই বেঞ্চেই বুধবার প্রশ্নের মুখে পড়ে এসএসসি। আদালতের প্রশ্ন ছিল, এসএসসি কেন ‘দাগি’ বা ‘চিহ্নিত অযোগ্য’দের পাশে দাঁড়াচ্ছে? ‘দাগি’দের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনও অবস্থানে কি এসএসসি রয়েছে?
আদালতের প্রশ্নের জবাবে এসএসসি-র আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নতুন নিয়োগে কারা যোগ দিতে পারবেন আর কারা পারবেন না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। প্যানেল-বহির্ভূত, মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে এবং সাদা খাতা জমা দিয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত করেছিল হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টও হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়েছে। তার বাইরে আর কেউ ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত হননি। এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্দেশ চাইছেন তাঁরা। কারা নতুন নিয়োগে যোগ দিতে পারবেন এবং কারা পারবেন না, তা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে চাইছে এসএসসি। সেই কারণেই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কল্যাণের আরও যুক্তি ছিল, ‘দাগি’দের চাকরি বাতিল হয়েছে। বেতনও ফেরত দিতে হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষায় কেন বসতে দেওয়া হবে না? কিন্তু রাজ্য বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কোনও যুক্তিই ধোপে টেকেনি। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখে। এর অর্থ হল, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না ‘দাগি অযোগ্য’রা।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement