মুম্বই হামলায় কি ভূমিকা, স্বীকারোক্তি রানার

IMG-20250707-WA0140

মুম্বই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী তাহাউর হুসেন রানাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে এনআইএ। আর সেই জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীদের হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।সূত্রের খবর, কিভাবে মুম্বই হামলার ছক কষা হয়েছিল, সেই কথাও রানা জানিয়ে দিয়েছে এনআইএ’একে।এমনকি এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় সেও যে বড় ভূমিকা পালন করেছিল, সেকথাও রানা স্বীকার করে নিয়েছে বলে খবর। রানা জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিশ্বস্ত এজেন্ট ছিল সে। ২৬/১১ হামলার পিছনে পাক গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই-এর ভূমিকা, ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে তার সম্পর্ক, হামলার পিছনে তার নিজের ভূমিকার মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রানা মুখ খুলেছে বলে সূত্রের খবর।বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সেই খবর সামনেও এসেছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, এনআইএ’র জিজ্ঞাসাবাদে তাহাউর রানা স্বীকার করে নিয়েছে, সে পাক সেনার বিশ্বস্ত এজেন্ট। তার দাবি অনুযায়ী, বন্ধু হেডলির সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের লস্কর ই তইবার একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেয় এই জঙ্গি। এবং লস্করের তরফে তাকে সন্ত্রাসবাদী নেটয়ার্ক তৈরি ও গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য নিয়োগ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানিয়েছে, ২৬/১১ হামলা চলাকালীন সে মুম্বইতেই ছিল এবং সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান চক্রি ছিল। এমনকী কাসভরা যাতে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি স্টেশনে হামলা চালাতে পারে তার জন্য এই এলাকা খতিয়ে দেখে সেখানকার বিস্তারিত তথ্য পাকিস্তানে থাকা হ্যান্ডলারদের কাছে পাঠিয়েছিল তাহাউর রানা। ২৬/১১ মামলায় ইতিমধ্যে যে চার্জশিট পেশ করেছে এআইএ, তাতে বলা হয়েছে ‘ইমিগ্র্যান্ট ল সেন্টার’ নামে এক সংস্থার প্রতিনিধি সেজে দিল্লি, মুম্বই, জয়পুর, পুষ্কর, গোয়া এবং পুনে-সহ বেশ কয়েকটি ভারতীয় শহরে ভ্রমণ করেছিল রানা। এনআইএ-কে রানা বলেছে, এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ছিল তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। এক মহিলাকে এই সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। হামলার আগে সম্ভাব্য হামলাস্থলগুলি চিহ্নিত করা এবং নজরদারি চালানোর জন্য একটি মুখোশের কাজ করেছিল এই সংস্থা। হামলার যাবতীয় আর্থিক লেনদেনও এই সংস্থার ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। রানা জানিয়েছে, ২০০৮ সালের নভেম্বরে সে ভারতে এসেছিল। সন্ত্রাসবাদী হামলার আগে সে মুম্বইয়ের পোওয়াইয়ের এক হোটেলে ছিল। হামলার আগে সেখান থেকে দুবাই হয়ে চিনের বেজিংয়ে চলে গিয়েছিল। হামলার আগে রেইকির কাজ করেছিল সে। ডেভিড হেডলিকে ছত্রপতি শিবাজি বাস টার্মিনাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলি শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল। রানার দাবি, লস্কর-ই-তৈবা এবং আইএসআই-এর সহযোগিতাতেই এই রেইকি করা হয়েছিল। এই হামলার পরিকল্পনার জন্য অভিযুক্ত পাকিস্তানি কর্তা সাজিদ মীর, আব্দুল রহমান পাশা এবং মেজর ইকবালকেও সে চেনে বলে স্বীকার করেছে রানা। সূত্রের খবর, রানা জানিয়েছে, ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের ‘রাওয়ালপিন্ডি আর্মি মেডিক্যাল কলেজ’ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিল সে। এর পরে কোয়েটায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিল সে। সিন্ধ, বেলুচিস্তান, বাহওয়ালপুর এবং সিয়াচেন-বালোত্রার মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল তাকে। সিয়াচেনে থাকাকালীন রানা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘পালমোনারি এডিমা’র কারণে তার ফুসফুসে তরল জমেছিল। এর ফলে সে সেনার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায়। পাক সেনাবাহিনী তাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেছিল। উল্লেখ্য, ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে যে পাকিস্তানের জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল তাদের অন্যতম মদতদাতা ছিল এই রানা। হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রী ছিল মার্কিন নাগরিক ডেভিল কোলম্যান হেডলি। রানা তারই ঘনিষ্ঠ। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় অন্তত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার প্রায় দেড় দশক ধরে রানাকে হাতে পেতে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ভারত। ২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় আমেরিকার আদালত। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তাকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু ভারতের প্রত্যর্পণের আবেদনে খুনের মামলায় ফের তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি এই জঙ্গিকে ভারতের প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রি এই জঙ্গিকে জেরা করেই এবার সামনে এল একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement