দিনহাটা: বংশপরম্পরায় দিনহাটা সীমান্ত গ্রামে বসবাস। দীর্ঘ বছরের কোন দিন জেলার বাইরে পা রাখেননি। অথচ এমনই একটি এক পরিবারের এক ব্যক্তিকে এনআরসির গেরোয় পড়তে হলো।দিনহাটা দুই ব্লকের সীমান্ত গ্রাম চৌধুরীহাটের সাদিয়ালিরকুটি গ্রামের উত্তম কুমার ব্রজবাসী নামে পরিবারের এক ব্যক্তির ৫০ বছর বয়স হলেও এখনও পর্যন্ত কোনদিনও কোচবিহারের বাইরে যাননি। এমনকি ওই পরিবারের আসামে কোন নিকটাত্মীয় নেই।অথচ আসাম সরকারের পক্ষ থেকে দিনহাটার চৌধুরীহাটের সাদিয়ালের কুঠি এলাকার উত্তম ব্রজবাসীকে পাঠান হয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশের নোটিশ। চলতি মাসের ১৫ই জুলাই এর মধ্যে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তাকে অনুপ্রবেশকারি হিসাবে চিহ্নিত করা হবে বলেও উত্তমের কাছে পাঠান নোটিশে উল্লেখ রয়েছে। গোটা ঘটনা তুলে ধরে সীমান্ত গ্রামের উত্তম ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন। হত দরিদ্র পরিবারের উত্তম জেলাশাসকের কাছে সপ্তাহখানেক আগে আবেদন করে উল্লেখ করেছেন, এবছরের প্রথম দিকে তার কাছে আসামের গোহাটি থেকে কুচবিহার জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের মাধ্যমে একটি নোটিশ আসে। আর এই নোটিশকে ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আন্দোলনে নামতে চলছে তৃণমুল। ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘আমি নাকি অনৈতিকভাবে কোন এক সময় গোহাটিতে গিয়েছিলাম এবং তাহার জন্য আসাম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল এফ টি কামরূপ (এম) সেকেন্ড কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে যাহার নম্বর এফ টি – ৭৫২/২০১৫। মহকুমা শাসকের মাধ্যমে ওই আবেদনে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, আমি ও আমার পরিবার এতটাই দরিদ্র যে আসামের গোহাটি তো দূর অস্ত আমি বা আমার পরিবার কোনদিন কোচবিহার জেলার বাইরে কখনো যাইনি বা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। অথচ আসাম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল এফ টি কোর্ট আমার বিরুদ্ধে ফরেনারস ট্রাইবুনাল আইনে মামলা শুরু করিয়াছেন যাহা এক কথায় এনআরসি।আমি নোটিশ পাইয়া উক্ত কোর্টে উপস্থিত হই এবং বিচারককে বলি আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। আমার বাবা মা এমনকি আমি জন্ম লগ্ন হইতে ভারতে বসবাস করিয়া আসিতেছে। আমার ভোটের কার্ড, আধার কার্ড রেশন কার্ড সবই আছে। যদি কোন বিষয়ে সন্দেহ থাকে তবে আপনারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে যাচাই করে নিতে পারেন। আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট থেকে বলা হয় আমার বাবার ভোটের তালিকার সার্টিফিকেট কপি ১৯৭০ সালের আগে হইতে বাবার মৃত্যুর তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনের তালিকা অর্থাৎ ভোটের লিস্ট দিতে হবে। ভোটের লিস্টের সার্টিফিকেট কপি জমা দিতে না পারলে আমাকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ঘোষণা করিবে। এমত অবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হওয়া সত্বেও মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদেরকে সমস্যায় ফেলা হয়েছে। উত্তমের আইনজীবী অপূর্ব সিনহা জানিয়েছেন, উত্তম কোনোদিন আসামে যায়নি। অথচ ২০১৫ সালে কেস হয়েছে নোটিশ এসেছে গত বছর ডিসেম্বরে। প্রায় নয় বছর পর নোটিশ এসেছে। এটা কি ধরনের ঘটনা বোঝা যাচ্ছে না। নোটিশে গিয়ে সিল রয়েছে তা রিসিভ করেছে সুপারেনটেনডেন্ট অফ পুলিশ। সিভিক ভলেন্টিয়ার্স এর মাধ্যমে উত্তম সেই নোটিশ পেয়েছে। এন আর সি কে যদি রাজ্য সরকার নাই ওয়েলকাম করে তাহলে জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ কি করে এটাকে উত্তমের বাড়িতে পৌঁছাল। জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষই সেটাকে আটকে দিতে পারত। এছাড়াও কোচবিহার রেকর্ডরুম থেকে ৭১ সালের আগে কোন কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। ভোটার লিস্টেরও কোন সার্টিফিকেট কপি দিতে পারছে না কন্টিনিউইটি ইয়ারে। অথচ সেটাই চাচ্ছে আসাম ফরেনার্স ট্রাইবুনাল এফ টি কোর্ট। জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ওই ব্যক্তির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন,” উত্তম কুমার ব্রজবাসি শুধু ভারতীয় নাগরিক নন তিনি একজন তপশিলি। কামরূপ জেলার এসপি কোন সাহসে কোচবিহারের দিনহাটার নাগরিককে এনআরসি সংক্রান্ত চিঠি পাঠায়। কিভাবে এখানকার নাগরিককে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে পুশব্যাক করে সেটা দেখব। পাশাপাশি এই ব্যাপার নিয়ে রাস্তায় নেমে যতটা আন্দোলন করা দরকার সেটা করব। উত্তমের বাড়িতে গিয়ে সমস্ত বিষয়টা খোঁজখবর নেব। ইতিমধ্যে সবকিছু জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসককে জানিয়েছি। আজ, সোমবার দলের বৈঠক রয়েছে। সেখানেই এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করা হবে।