প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর পোস্টের সংখ্যাও বাড়ছে। আর তাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে প্ররোচনামূলক ও ভুয়ো খবর ছড়ানোর প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব রুখতে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কড়া আইন প্রণয়নই নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে জনসচেতনতাও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর এবং জাল ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে সমাজের একাংশে আগ্রাসী মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মতে, সাইবার অপরাধ ক্রমশ বাড়ছে। তাতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়ো খবর, তথ্য এবং ভিডিয়োয় সমাজের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। এমনকি, মহিলা, শিশু, বয়স্ক এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে। এই প্রবণতা রুখতে আইনসভার কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজমাধ্যমে ব্যক্তি, সংস্থা বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রবণতা রুখতে কড়া আইনের পাশাপাশি সাইবার পরিকাঠামোর উন্নয়ন, ডিজিটাল শিক্ষা প্রসার এবং সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন রয়েছে বলেও মত মুখ্যমন্ত্রীর। আর এই সব বিষয়গুলিই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘প্রতারণা, পরিচয়পত্র চুরি, ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্যের অপব্যবহার, অবমাননা করার মতো নানা ঘটনার জেরে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বহু প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী মহিলারা, শিশু, প্রবীণ এবং দুর্বল আর্থ-সামাজিক অবস্থানের নাগরিকেরা। যাঁদের পক্ষে এই সব প্রযুক্তিগত অপরাধ প্রতিহত করা বা প্রতিকারের পথ খোঁজা কার্যত অসম্ভব।’’ গুজব এবং ভুয়ো তথ্য চিহ্নিত করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন এবং সন্দেহজনক সাইবার কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রিপোর্টিং পদ্ধতি আরও সহজ করার কথাও বলেছেন তিনি। শাহকে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, সাইবার অপরাধ রুখতে কঠোরতম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তেমন হলে আইনসভা এতে হস্তক্ষেপ করুক। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে নতুন আইন প্রণয়ন হোক কিংবা যেসব আইন রয়েছে, তার সংশোধন করারও আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।