কসবার আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। এই ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে
রাজ্যকে তদন্ত রিপোর্ট এবং কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এই ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজকেও হলফনামা জমা দিতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজ্য এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কসবার ঘটনায় সামনে এসেছে প্রাক্তনীদের ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণের বিষয়টি। সেই বিষয়টিও উঠে আসে এদিনের শুনানিতে। রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন রুম যাতে বন্ধ রাখা হয়, এই মর্মে নোটিস জারি করতে উচ্চশিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন মামলাকারীর তরফে এই আবেদন করা হয়েছিল। কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছিলেন, উচ্চশিক্ষা দপ্তর আগে একটি মামলায় হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল, রাজ্যের কোনও কলেজে ছাত্র নির্বাচন হয়নি। ফলে সেখানে কোনও বৈধ ছাত্র সংসদও নেই। তাই সব কলেজে ইউনিয়ন রুম খোলা থাকার প্রয়োজনও নেই। ওই যুক্তি শুনে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, রাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ইউনিয়ন রুম বন্ধ করার জন্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে নোটিস জারি করতে হবে। কর্তৃপক্ষ ওই রুম তালা দিয়ে রাখবেন। জরুরি কোনও কারণ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে তা জানিয়ে চিঠি দিয়ে তালা খোলার জন্য আবেদন করতে হবে। উল্লেখ্য, কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে টিএমসিপি-র যোগ থাকার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বিরোধী দলগুলির নেতারা। তাঁদের প্রশ্ন, কবে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন? যদিও মনোজিৎ যে এখন আর সংগঠনের কেউ নন, এই দাবি করেন টিএমসিপি-র রাজ্য নেতৃত্ব।অতীতে ছাত্র সংসদের ভোট করার দাবিতে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের ৯ অগস্ট আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনার পরে থ্রেট কালচার নিয়ে আন্দোলনে নামেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। সেই সময়েও তাঁদের অন্যতম দাবি ছিল দ্রুত ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আদালতের এই নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিকাশ ভবনের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর, উত্তরবঙ্গ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজগুলিতে শেষবারের মতো ছাত্র ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালে এবং ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্সি এবং ২০২০ সালে যাদবপুরে ছাত্র ভোট হয়েছিল। তার পরে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছাত্র নির্বাচন হয়নি। কিন্তু ছাত্রভোট না হলেও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ইউনিয়ন রুম খুলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। কসবার আইন কলেজে দাপিয়ে বেড়াত মনোজিৎ মিশ্র। ইউনিয়নরুমেও চলত তার দাদাগিরি। এবার রাজ্যে সব ক্যাম্পাসে ভোট না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ দিন আদালতে উঠে আসে। কোনও ভাবেই সংবাদমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যাতে নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ না হয়, তার জন্য রাজ্যকে নির্দেশিকা দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট-এর তদন্তে তাদের আস্থা রয়েছে। এর আগেও নির্যাতিতার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছিল, তারা সিবিআই তদন্ত চান না। পুলিশের তদন্তের উপরেই তাদের আস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যেই অবশ্য সিট-এর হাত থেকে ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।