একাধিক কুকীর্তি মনোজিতের নামে, প্রশ্ন পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে

Kasba-rape-incident-accused-Monojit-Mishra-old-incidents-revealed

সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজের ঘটনায় আপাতত শ্রীঘরে মনোজিৎ মিশ্র। এই কলেজেরই প্রাক্তনী তথা বর্তমান চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে পরিচিতি আছে তার। শুধু তাই নয, কলেজেও বেশ প্রভাবশালী হিসেবেই পরিচিত ছিল। তবে এই মনোজিৎ সম্পর্কে একটু খোঁজখবর করতেই সামনে এল বিস্ফোরক সব তথ্য। কেবলমাত্র বুধবারের ধর্ষণ কাণ্ড-ই নয়, এর আগেও একাধিকবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে এই মনোজিতের বিরুদ্ধে। কিন্তু এক অদৃশ্য কারণে মনোজিতের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।
এদিকে বুধবারের এই ঘটনার পর সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে প্রবেশ করতেই নজরে পড়বে বিভিন্ন দেওয়ালে নীল-সাদা রঙে লেখা ‘টিম এমএম’। কোথাও আবার চোখে পড়বে ‘মনোজিৎ দাদা তুমি আমাদের হৃদয়ে আছ’। সব জায়গাতেই লেখা, ‘দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল কংগ্রেস’। এছাড়াও মিলেছে মনোজিৎ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য। ঘনিষ্ঠ মহলে এই মনোজিৎ পরিচিত ‘ম্যাঙ্গো’ নামে। এ ছাড়াও কলেজ পড়ুয়ারা এও জানান, ভর্তি থেকে শুরু করে কলেজ ইউনিয়নের কে কোন পদে বসবেন, সবই চলত মনোজিতের ইচ্ছের উপর। এমনকী, অনেক সময়েই কোন শিক্ষক কখন-কোন ক্লাস নেবে, তা-ও অনেক সময়ে ঠিক করে দিত এই ম্যাঙ্গোই। কলেজের কর্মী থেকে অধ্যক্ষ, সবাই নাকি থাকত তার হাতের মুঠোয়। কোন শিক্ষককে ঘেরাও করা হবে, কার গাড়ি ভাঙচুর করা হবে, তা-ও হত ম্যাঙ্গোর ইশারাতেই। এমনটাই জানা গিয়েছে কলেজ পড়ুয়াদের সূত্রে। শুধু তাই নয়, কালীঘাট মন্দির চত্বরে বাড়ি মনোজিৎ মিশ্রর প্রবল দাপট। তার দাপটে নাকি পাড়ার লোকও সিঁটিয়ে থাকেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে প্রথমবার কলেজে ভর্তি হয়েছিল সে। এক বছরের মধ্যে কলেজে ছুরি মারার অভিযোগে থানায় অভিযোগ দায়ের হয় তার নামে। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর কলেজ যায়নি সে। এরপর ২০১৪ সালে তাকে ডিসকলেজিয়েট করে দেওয়া হয়। এদিকে এও জানা যাচ্ছে, প্রথম থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করতো এই মনোজিৎ। ছিল ইউনিট প্রেসিডেন্টও। তারপর ২০১৭ সালে ফের সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে ভর্তি হয় ম্যাঙ্গো। সে বছরই সিসিটিভি ভাঙচুরের ঘটনায় নাম জড়ায় তার। একাধিকবার সাসপেন্ডও করা হয় মনোজিৎকে। সূত্রের খবর, ওই কলেজের প্রয়াত প্রিন্সিপাল দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। ২০২১ সালে পাশ করলেও কলেজ ছেড়ে যায়নি। একাধিক ঝামেলা-গোলমালে নাম জড়িয়েছে তার। এই কলেজে একচ্ছত্র ক্ষমতা দখল করে বসেছিল সে। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে তার ছবির জেরে চমকে রাখত জুনিয়রদের। কলেজ এবং বাইরের একাধিক তরুণীকে হেনস্থা ও উত্যক্ত করার অভিযোগও রয়েছে এই মনোজিতে নামে। আর এই ধরনের যে সব অভিযোগ মনোজিতের বিরুদ্ধে উঠছে তা যে সত্য তার প্রমাণ মিলল
কালীঘাট এলাকার তথা ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের কথায়। প্রবীরবাবু স্পষ্ট জানান, এলাকায় নানা ঘটনায় দুর্নাম ছিল এই মনোজিতের। আর সেই কারণে তিনি তাঁর এলাকায় দলের কাজে ওকে ঢুকতে দিতেন না। একইসঙ্গে প্রবীরবাবু এও জানান, মনোজিতের নামে নানা অভিযোগ নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা বারবার এসেছেন তাঁর কাছে। এমনকী দলের নাম করেই ওই ‘গুণধর’ এলাকায় অনেক কুকাজ করেছেন দীর্ঘদিন থেকে। আর এই ঘটনারই রেশ টেনে তিনি এও বলেন, ‘দলের নাম কাজে লাগিয়ে এলাকায় অনেক কাজ করেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম, দলের জন্য এই ছেলেটা খারাপ।’ সঙ্গে এও জানান, ‘ চিনতাম না, এটা বলব না। কারণ আমি ওকে এলাকায় নয় কিন্তু এলাকার বাইরে অনেক দলীয় কর্মসূচিতে দেখেছি। সাধারণ মানুষ একাধিক অভিযোগ করতো বলে, আমি ওর সঙ্গে মিশতাম না। কিন্তু কেউ যদি আমার কাছে এসে পিছনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে, তাহলে আমি কী করে বুঝব তার ব্যক্তিগত বা মানসিকতায় কি রয়েছে।’ এর পাশাপাশি ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগের অন্ত নেই এই মনোজিতের বিরুদ্ধে। তাঁরা জানান, আগেও একাধিক বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে ওই যুবক। কারও কথাই নাকি শুনত না। সকালে মিষ্টি কথা বলতো। বিকেলে সম্পূর্ণ বিপরীত। মুখের ভাষা থেকে অন্যান্য বিষয়ে মনোজিতের সঙ্গে কথা বলা যেত না।তবে এই সব তথ্য সামনে আসার পর কিন্তু বড় প্রশ্নের মুখে তৃণমূল হাই কমান্ড। কারণ, কসবা কাণ্ডে ধৃত মনোজিৎ মিশ্র সম্পর্কে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য শুক্রবার বলেছেন, ‘২০১৯ সালে দক্ষিণ কলকাতা জেলার সবচেয়ে নিম্ন যে পদ, যে সংগঠন থেকে ছাত্রনেতারা উঠে আসেন, মনোজিতকে সেই সংগঠনের সম্পাদক করা হয়েছিল। আমাদের ব্যর্থতা যে আমরা জ্যোতিষবিদ্যা জানি না। তাই ২০২৫ সালে তিনি কিছু করবেন কি না, সত্যিই যদি তিনি কিছু করে থাকেন, তা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি।’ শশী পাঁজা বলেন, ‘কোনও বাঁদরামি সহ্য করা হবে না’। কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মেরে পিঠের চামড়া গুটিয়ে নেওয়া উচিত’। এবার কিন্তু প্রশ্ন উঠেই গেল ২০১২-১৩ সাল থেকে মনোজিৎ যে ধরনের কাজ সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ এবং নিজের এলাকায় করেছেন তা কি সত্যিই জানতো না তৃণমূল নেতৃত্ব। নাকি এক জঘন্য অপরাধে ফেঁসে যেতেই মনোজিতকে না চেনার চেষ্টা! ‘বাঁদরামোগুলি’ কি জানতো না তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, নাকি জেনেও না জানার ভান করে বসেছিল।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement