যত সময় গড়াচ্ছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে। হামলা ও পাল্টা হামলায় তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। এই আবহে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানকে নিশানা করল জি৭-এর সদস্য দেশগুলি। তাদের বক্তব্য, ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না। জি৭-এ যে দেশগুলি রয়েছে সেগুলি হল, আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই বছর জি৭-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির বার্ষিক বৈঠক হচ্ছে কানাডায়। সেই বৈঠকেই উঠে আসে ইজরায়েল ও ইরানের সংঘাত প্রসঙ্গ।বৈঠকের পর সাত সদস্যের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ওই বিবৃতিতেই ইরানের সমালোচনা করে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানায় জি৭-এর সাত সদস্য। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতের আবহে অন্য মাত্রা পেয়েছে এই বৈঠক। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তড়িঘড়ি জি-৭ সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দিনের প্রথমার্ধেই জি৭ সম্মেলনের কর্মসূচিগুলিতে যোগ না দিয়ে বেরিয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিম এশিয়ার এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য জি৭ সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের চলে যাওয়ার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ দাবি করেন, ‘ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির জন্য ট্রাম্প ওয়াশিংটনে ফিরছেন।’ কিন্তু এই দাবি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে সোশ্যাল হ্যান্ডলে ম্যাক্রোঁর সমালোচনায় লেখেন, ‘ওঁর কোনও ধারণা নেই আমার কাজ সম্পর্কে। তবে কোনও সংঘর্ষবিরতির ব্যাপার নেই। বিষয়টি এর থেকেও অনেক বড়।’ অন্যদিকে, পশ্চিম এশিয়ার এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জি৭ সম্মেলনে সামিল দেশগুলি। যৌথ বিবৃতিতে সবাই চায়, এই দুই দেশেই শান্তি ফিরুক। তবে এই গোষ্ঠীতে সামিল সব রাষ্ট্র এক বাক্যে সম্মতি দিয়েছে যে, ইরানকে মোটেই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হতে দেওয়া যাবে না। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইজ়রায়েলের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে। তাদের নিজেদের নিরাপত্তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, ইরান পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতার অন্যতম উৎস। সে ক্ষেত্রে তাকে কিছুতেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না।’ উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই দ্রুত তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাতেই একাংশের ধারণা, ইরানে আরও বড় হামলা চালাতে চলেছে ইজ়রায়েল। সেই ইঙ্গিতই রয়েছে ট্রাম্পের সাবধানবাণীতে। অন্যদিকে, খবর মিলেছে ইরানের বর্তমান সেনা সর্বাধিনায়ককেও খতম করে ফেলেছে ইজ়রায়েল। ইরানে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে তেল আভিভ।কয়েক দিন আগেই, ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, পশ্চিম এশিয়াকে শান্ত করতে হলে ইরানকে পরমাণু শক্তিধর হতে দেওয়া যাবে না। একই কথা বলেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও। গত রবিবার ওমানে আমেরিকার সঙ্গে ইরানের পরমাণু বৈঠকে বসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। ইরান জানিয়ে দেয়, সংঘাতের এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় বসা যায় না।প্রসঙ্গত, পরমাণু বোমা প্রায় হাতে পেয়ে যাচ্ছে ইরান, এই আশঙ্কায় গত শুক্রবার সকালে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করে তেল আভিভ। ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালানো হয়। তার জেরে মৃত্যু হয় ইরান সেনার চিফ অফ স্টাফ মহম্মদ বাঘেরি, রেভোলিউশনারি গার্ডসের কমান্ডার হোসেন সালামি এবং ইরানের এমার্জেন্সি কমান্ডের কমান্ডারের। প্রাণ হারান ইরানের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলি শামখানিরও। এছাড়াও পারমাণবিক গবেষণাকারী অন্তত ৬ জন বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ইরান। বহু সেনাকর্মী এবং আধিকারিকেরও মৃত্যু হয় ইজরায়েলি হামলায়। তারপর থেকে যত সময় যত গড়িয়েছে ততই তীব্রতর হয়েছে সংঘাত। এই আবহে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানকেই দুষল জি৭-এর দেশগুলি।