বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিধানসভা কক্ষে সোমবার এভাবেই সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের নিশানা করে তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, লজ্জা করে না আপনাদের। আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং অন্য পরিচয়পত্র থাকার পরেও শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার এই কাজ করেছে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই।এরপরেই তিনি বলেন, যে সব জায়গায় বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার রয়েছে, সেখানেই এই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।মূলত অসম সরকারের পুশব্যাক নীতি অর্থাৎ অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের ধরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নীতিকেই কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এরই মধ্যে রবিবার মহারাষ্ট্রের ওই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে।আর তারেপরেই সোমবার বিধানসভা কক্ষে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। মূলত মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়া তিন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে মুম্বই পুলিশ আটক করে বাংলাকে না জানিয়েই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যত ক্ষিপ্ত মমতা বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তোপ দাগেন। আসলে গত কয়েক মাস ধরেই ভুয়ো নথিতে ভারতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের পুশ ব্যাক নীতিকে সামনে রেখে ধরপাকড় শুরু করেছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, অসম সহ বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার। তবে ঘটনার কথা জানাজানি হতে ও পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের নজরে আসলে রাজ্যের উদ্যোগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তরফে ফ্ল্যাগ মিটিং করে ওই তিন জনকে আবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম রবিবারই এই ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। এর পরে সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে বক্তৃতার সময় মহারাষ্ট্রের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।মহারাষ্ট্রের এই ঘটনা টেনে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপিকে কড়া সমালোচনাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।তবে ওই তিন পরিযায়ী শ্রমিকই আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বলেই তাঁরা দাবি করেন। সামিরুল সমাজমাধ্যমে জানান, যে তিন জনকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গেরই বাসিন্দা। দু’জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদে এবং এক জনের পূর্ব বর্ধমানে। সামিরুলের বক্তব্য, ১০ জুন রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের নজরে বিষয়টি আসে। তার পরেই মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই তিন জনের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরেও রাজ্য সরকার, পুলিশ বা পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদকে না জানিয়েই তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন সামিরুল।