কাশ্মীরে বিশ্বের উচ্চতম রেলব্রিজের সূচনা প্রধানমন্ত্রীর

ejvdlgog_chenab-bridge_625x300_06_June_25

উপত্যকায় উন্নয়নে জোর কেন্দ্রের। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর প্রথমবার কাশ্মীরে পা রেখেই একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শুক্রবার কাশ্মীরে বিশ্বের উচ্চতম রেলব্রিজ চেনাব সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে এদিন সূচনা হয় শ্রীনগর-কাটরা রেলপথেরও। চেনাব রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরেই এই রেলব্রিজ ধরে ছুটে যায় বন্দে ভারত ট্রেন। এ ছাড়াও, এ দিন অঞ্জি ব্রিজের উদ্বোধনও করেন মোদী। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও। চেনাব সেতু উদ্বোধন করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘যত ভাল কাজ রয়েছে, তা আমার জন্যই পড়ে ছিল। আমার সরকারের সৌভাগ্য যে, এই প্রকল্প আামাদের সময়কালেই গতি পেয়েছে এবং আমরা তা শেষ করে দেখিয়েছি।’’ আইফেল টাওয়ারের সঙ্গে চেনাব সেতুর তুলনা টেনে মোদী বলেন, ‘‘আইফেল টাওয়ার দেখতে লোকে প্যারিস যায়। আর এই সেতু আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু। এ বার লোক চেনাব সেতুর জন্য কাশ্মীরে আসবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পর্যটন তো বাড়বেই, এ ছাড়াও অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রও লাভবান হবে।’’ এই রেলপ্রকল্প ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ বলেও মনে করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীরি পণ্য এ বার থেকে আরও কম সময়ে এবং সহজে পৌঁছে যাবে দেশের অন্য প্রান্তে।’’ উদ্বোধনের আগে কাশ্মীরের চেনাব সেতু ঘুরে দেখেন মোদী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীও। চেনাব সেতুর পর কাটরা স্টেশন থেকে দু’টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র তিন ঘণ্টায় কাটরা থেকে শ্রীনগর পৌঁছে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। মোদী বলেন, ‘‘ভারতের একতা এবং ভারতের ইচ্ছাশক্তির বড় উৎসব। বৈষ্ণোদেবীর আশীর্বাদে আজ কাশ্মীর ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে জুড়ে গেল। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী জুড়ে গেল রেলপথের মাধ্যমে। কাশ্মীর নতুন গতি পেল।’’ জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার কউরি এবং বক্কল এলাকা সংযোগকারী সেতু হলো চেনাব। এর ফলে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হতে চলেছে। উপত্যকার রেলপথ দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত হলো। যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে পারবে এই সেতু। এতদিন পর্যন্ত কাশ্মীর উপত্যকাকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করার একমাত্র স্থলপথ ছিল ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়ক। কিন্তু তুষারপাতের কারণে সেই রাস্তা অনেক সময়ে বন্ধ রাখতে হতো। কিন্তু, চেনাব সেতু নির্মাণের ফলে উপত্যকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলো। সারা বছর ধরেই সড়কপথে গোটা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে উপত্যকার। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং ২০০৪ সালে কাজও শুরু হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় হাওয়ার তীব্র গতির জন্য। নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই প্রকল্প পুনরায় শুরু করে এবং ২০২২ সালের অগস্ট মাসে এই নির্মাণ কাজ শেষ হয়।এ ছাড়াও এ দিন ভারতের প্রথম ঝুলন্ত রেল সেতু অঞ্জিও উদ্বোধন করেন মোদী। আপাতত বৈষ্ণোদেবী-কাটরা থেকে শ্রীনগরের মধ্যে যাতায়াত করবে ২টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। গত এপ্রিলের ১৯ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচি থাকলেও আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় সেদিন তা স্থগিত হয়ে যায়।

২২ এপ্রিল পহলগাঁও জঙ্গি হামলা হয়। এরপর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অপারেশন সিন্দুর শুরু করে ভারত। কিন্তু সেই অভিযানের পরও কাশ্মীরে পর্যটকদের ফেরানো এবং কাশ্মীরবাসীর মধ্যে আস্থা ফেরানো, দুটোই চ্যালেঞ্জ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে। সেই লক্ষ্যেই শুক্রবার চেনাব ব্রিজ এবং শ্রীনগর-কাটরা রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, একমাত্র উন্নয়নই দুই লক্ষ্য একসঙ্গে পূরণ করতে পারে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্রিজটির উদ্বোধন করে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে সেটার উপর হাঁটতেও দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement