মৃত ৩, নিখোঁজ ৬ জওয়ান
ধসে বিপর্যস্ত সিকিমে একদিকে যেমন পর্যটকরা আটকে পড়েছেন, চলছে উদ্ধার কাজ, অন্যদিকে উত্তরপূর্বের রাজ্যের ছাতেনে রবিবার সন্ধ্যায় ধস নেমেছে একটি সেনাক্যাম্পে। এই ঘটনায় কমপক্ষে তিন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নিখোঁজ ছয় সেনাকর্মী। উত্তরপূর্বের পাহাড়ে বৃষ্টি আসে আগেভাগে। বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্যোগে বিপর্যস্ত লাচুঙ ও লাচেঙ। ধসে রাস্তার পাশপাশি ব্রিজ ভেঙে বহু জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তিস্তা নদীর জল বিপদসীমার উপরে বইছে। এই অবস্থায় সোমবার সকাল থেকে লাচুঙে আটকে থাকা পর্যটকদের নামিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। কঠিন হচ্ছে বিপদসংকুল লাচেঙে আটকে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে নামিয়ে আনার কাজ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উদ্ধারে লাগাতার কাজ করছে সেনা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এছাড়াও পর্যটকদের উদ্ধারকাজে সাহায্য করছেন স্থানীয় লাচুংপা সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রশাসনকে সাহায্য করছেন লাচুংয়ের হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরাও। এর মধ্যেই রবিবার সন্ধে সাতটা নাগাদ ধস নামে ছাতেনের সেনাক্যাম্পে। বড়সড় ধসে প্রাথমিক ভাবে ৯ জন সেনাকর্মী নিখোঁজ হন। পরে ৩ জনের মৃতদের উদ্ধার করেছে সেনা। বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম। টানা বৃষ্টিতে নেমেছে ধস। ফুঁসছে তিস্তা। গত বৃহস্পতিবার ১০০০ ফুট নিচে তিস্তায় পড়ে গিয়েছিল গাড়ি। মারা যান কমপক্ষে এক জন। নিখোঁজ বহু। এই পরিস্থিতিতে ১০ নম্বর জতীয় সড়কে (সেবক–রংপো) গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল।প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ২ ও ৩ জুন সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টো অবধি বন্ধ থাকবে সুন্টালি, লিখুবীর ও মেল্লি। শিলিগুড়ি থেকে এই জায়গাগুলোয় যাওয়া যায়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশিকা জারি থাকতে পারে। এমনকী দার্জিলিং, কালিম্পং, নামচি, গ্যাংটকের রাস্তাতেও যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।এটা ঘটনা উত্তর সিকিম একেবারে বিপর্যস্ত। টানা বৃষ্টির জেরে একাধিক রাস্তায় ধস। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। তার উপর তিস্তার জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

এই অবস্থায় জরুরি নির্দেশিকা জারি করল প্রশাসন। এদিকে উত্তরবঙ্গের আকাশে ইতিমধ্যেই জমেছে কালো মেঘের ছায়া। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, পরবর্তী তিন দিন জুড়ে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং সহ পার্বত্য জেলাগুলিতে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। হিমালয় সংলগ্ন এলাকাগুলিতে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনাও ক্রমবর্ধমান।গতকাল পর্যন্ত ভুটানঘাটে ১১ সেন্টিমিটার, বক্সাডুয়ার ও কুমারগ্রাম চা বাগানে ৯ সেন্টিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে ‘ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির’ সম্ভাবনা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, হিমালয় ঘেঁষা অঞ্চলগুলিতে দৃশ্যমানতা নেমে এসেছে এক কিলোমিটারের নিচে। তিস্তা, তোর্সা ও জলঢাকা নদীতে জলস্তর দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে ফ্ল্যাশ ফ্লাড বা আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।অন্যদিকে, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন। সকাল থেকেই কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় দেখা যেতে পারে। তবে হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শহরে টানা বৃষ্টি বা বড় কোনও ঝড়ের আশঙ্কা নেই।এদিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ, যা শহরবাসীর জন্য প্রবল অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।আবহাওয়া দপ্তরের তরফে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পার্বত্য ও নিম্নাঞ্চলে কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়া, ফসলের ক্ষতি, শহরে জল জমে যাওয়া এবং ভূমিধসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

দক্ষিণবঙ্গে আপাতত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হলেও, ৬ জুনের পর থেকে আবহাওয়া আবার শুষ্ক ও গরম হয়ে উঠবে বলে পূর্বাভাস। জনসাধারণকে সতর্কতামূলক কিছু দিক নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে-খোলা মাঠ বা জলাশয়ে না যাওয়া, বজ্রপাত চলাকালীন ঘরে থাকা, কাঁচা বাড়িতে বসবাসরতদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ।উত্তরবঙ্গের দিকে প্রকৃতির রোষ ক্রমেই প্রবল হচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ছে অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নাগরিককে আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশ মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।