ফের পুলিশ তলব এড়ালেন অনুব্রত মণ্ডল। বোলপুরের আইসিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগে শনিবারের পর রবিবারও বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতাকে তলব করেছিল পুলিশ। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন কেষ্ট। পুলিশকে হুমকি মামলায় এফআইআর হয়েছে বীরভূমের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার বেলা ১১টায় তাঁকে এসডিপিও অফিসে হাজিরা দিতে বলে পুলিশ। কিন্তু সেই তলবে সাড়া দেননি অনুব্রত। তাঁর আইনজীবীরা এসডিপিও অফিসে গিয়ে জানিয়েছিলেন, শনিবার অনুব্রতের পক্ষে হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়। শারীরিক অসুস্থতা এবং আরও কয়েকটি কারণে অনুব্রতর হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। এরপর রবিবার ফের অনুব্রতকে তলব করা হয়। কিন্তু এদিনও হাজিরা দেননি তিনি।এদিন তৃণমূল নেতার এক আইনজীবী এবং এক ঘনিষ্ঠ এসডিপিও অফিসে পৌঁছেন। পরে তাঁরাই ইঙ্গিত দেন যে রবিবারও আসতে পারবেন না অনুব্রত মণ্ডল। বেলা ১১টা নাগাদ এসডিপিও অফিসে যান কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ গগন সরকার। মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের অফিসে এসে ‘এআই ক্রিয়েটেড অডিয়ো’ তত্ত্ব তুলে ধরেন গগন। তিনি দাবি করেন, ‘‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ওই অডিয়ো ক্লিপটি পাঠানো হয়েছে।’’ তবে তাঁর দাবিকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে।যদি অডিয়োটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়, তা হলে তা বলতে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগলো কেন?যদি অনুব্রত মণ্ডল কোনও দোষ না করে থাকেন, তাহলে তিনি দলের কাছে লিখিত ভাবে ও ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাই বা করলেন কেন? তা ছাড়া, যদি এআই দিয়েই এই অডিয়ো ক্লিপ তৈরি হয়, তা অনুব্রত মণ্ডল নিজে কেন বললেন না বা ক্ষমা প্রার্থনার চিঠিতেও কেন উল্লেখ করলেন না? আর এ নিয়ে বলার জন্য এত লোক থাকতে, হঠাৎ গগন সরকারকেই বা সামনে ঠেলে দেওয়া হলো কেন? গগন এসডিপিও অফিস থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘উনি বাড়িতে আছেন। বিছানায় আছেন। শুয়ে আছেন। যা জানার পুলিশের কাছে জেনে নিন। আর পার্টির নির্দেশে অনুব্রত চলেন। তিনি অনুগত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। পুলিশের অভিযোগ তারা দেখবে। তদন্ত হবে।’’ যদিও অনুব্রত দুপুরে এসডিপিও অফিসে হাজিরা দেবেন কি না গগন স্পষ্ট করেননি। অনুব্রতের আইনজীবী বিপদতারণের বক্তব্য, ‘‘চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। উনি অসুস্থ বলে পুলিশকে জানানো হয়েছে। তবে তদন্তে সহযোগিতা করবেন অনুব্রত।’’ সম্প্রতি ভাইরাল হয় একটি অডিয়ো ক্লিপ। সেই অডিও ক্লিপে এক জনকে বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোন করে হুমকি দিতে শোনা যায়। সেখানে শোনা যায়, আইসি-র উদ্দেশে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হয়নি তাঁর স্ত্রী এবং মা-কেও। অনুব্রত মণ্ডলই থানার আইসিকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আর্থিক লিপি।তবে এই অডিও ক্লিপ সামনে আসতেই তোলপাড় পড়ে যায়। সেই অডিয়ো ক্লিপে বলা হচ্ছে, ডেপুটেশন দিতে গিয়ে থানা থেকে বার করে আইসিকে পেটানো হবে। শুধু তাই নয়, বোলপুর থানার আইসির মা-স্ত্রীর উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শোনা যাচ্ছে। মিছিলের জমায়েতে পুলিশি রিপোর্ট নিয়ে আইসির বিরুদ্ধে তোপ দাগতেও শোনা গিয়েছে। যদিও কণ্ঠস্বরটি তৃণমূল নেতা অনুব্রতের কি না তার সত্যতা আর্থিক লিপি যাচাই করেনি। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তারপরেই বীরভূমের তৃণমূল নেতাকে তলব করে পুলিশ। যদিও পর পর দুদিন পুলিশি তলব এড়িয়ে গিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল।