কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শুধুমাত্র কেরলে নয় কর্নাটক, তামিলনাড়ু, মিজোরামে বর্ষার আগমন হয়েছে। আগামী দু-তিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করবে বর্ষা। চলতি মরশুমে বর্ষা বেশি হতে পারে। পূর্বাভাস দিয়েছিল মৌসম ভবন। সেই পূর্বাভাস কার্যত সত্যি প্রমাণ করে আজ শনিবার বর্ষা ঢুকল কেরলে। নির্ধারিত সময়ের আট দিন আগেই ভারতীয় মূল ভূ-খণ্ডে প্রবেশ বর্ষার। শুধু তাই নয় দেশের জলবায়ুর ১৬ বছরের ইতিহাসে নির্ধারিত সময়ের এত আগে দেশে প্রবেশ করল বর্ষা। ১৬ বছর পর প্রথমবার এত আগে মূল ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করল মৌসুমি বায়ু। শেষবার ২০০৯ সালে ২৩ মে বর্ষা প্রবেশ করেছিল। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে বর্ষা প্রথম প্রবেশ করে। তারপর দেশে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। প্রবেশের তারিখ ১ জুন। কিন্তু এবার ৮ দিন আগেই মৌসুমি বায়ু এল ভারতে। জলবায়ুর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি বর্ষা প্রবেশ করেছিল ১৯১৮ সালে। তারিখটা ১১ মে। সবচেয়ে দেরিতে বর্ষা এসেছিল ১৯৭২ সালের ১৮ জুনে। সেইবার ৯ জুন কেরলে ঢোকে মৌসুমি বায়ু। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বর্ষা ঢোকে ৮ জুন। ২০২২ সালে বর্ষা আসে ২৯ মে। ২০২১ সালে বর্ষা আসে জুন মাসের ৩ তারিখে। চলতি মরশুমে এল আট দিন বাকি থাকতেই। দক্ষিণবঙ্গে কখনও মাঝারি, কখনও ভারী বৃষ্টির জেরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়নি সেভাবে। সহজ ভাবে বললে, এই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির জেরে তাপপ্রবাহ থেকেও রক্ষা পেয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। কখনও দিনে, কখনও রাতে বৃষ্টিতে ভিজছে কলকাতা,বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর। শুধু বৃষ্টি নয়,সঙ্গে বয়েছে ঝড়ো হাওয়াও। তার জেরে মাত্রাছাড়া গরম থেকে এবার কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। এরই মাঝে আরও এক স্বস্তির খবর দিল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।
বর্ষা আসছে রবিবার থেকেই। আর এখানেই বড় প্রশ্ন কলকাতা পুরসভার সামনে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তারা আদৌ প্রস্তুত কি না। এদিকে মৌসম ভবন সূত্রে খবর, সময়ের সাতদিন আগেই বর্ষা আসছে কেরলে। মৌসম ভবনের রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবার থেকেই কেরলে শুরু হচ্ছে বর্ষার বৃষ্টি। রবিবারই বর্ষা ঢুকবে উত্তর-পূর্ব ভারতেও। এদিকে, আরব সাগরে তৈরি হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। শনিবারই সেটা এগিয়ে এসে স্থলভাগে ঢুকবে। ফলে, দেশের পশ্চিম উপকূল জুড়ে প্রবল বৃষ্টির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে মৌসম ভবনের তরফ থেকেও। এই প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদদের ধারনা, এবার অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিতেই রয়েছে দুর্যোগের সম্ভাবনা। বেঙ্গালুরু, মুম্বইতে জল জমে যে দুর্দশার ছবি সামনে আসে সে ছবির কোনও পরিবর্তন হবে না এবারও। বর্ষার আগেই হাবুডুবু খেতে পারে একের পর এক মেগাসিটি। এরই মধ্যে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের জন্যও। এবার স্বাভাবিকের থেকে ৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই কলকাতা ভাসবে কি না তা নিয়ে চলছে জল্পনা। জল্পনা চলছে, এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কলকাতা পুরসভা আদৌ তৈরি কি না। অনেকেই মনে করছেন, অপর্যাপ্ত নিকাশি ব্য়বস্থা আগামী ৪ মাস উদ্বেগে রাখবে কলকাতা পুরসভাকে। অর্থাৎ,এবারর বর্ষায় প্লাবন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে পুরপ্রশাসনের কাছে। আষাঢ়ের আগে জ্যৈষ্ঠেই ঝেঁপে বৃষ্টি আসছে কলকাতায়। আগামী সপ্তাহেই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। মঙ্গলবার উত্তর বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধ-বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাত বাড়বে। জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। আগামী বুধবার দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণের ৬ জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত রোজই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকছে। ২৪-২৬ মে-এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, মধ্যপ্রদেশ, বিদর্ভ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা এবং বিহারে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।