ইউনূসের পদত্যাগ ঘিরে জল্পনা

IMG-20250523-WA0238

গত বছরের আগস্ট মাসে প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মাঝে বাংলাদেশে পতন হয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারের। প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন হাসিন। তারপর বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তৈরি হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর কয়েক মাস যেতে না যেতেই প্রকাশ্যে এসে পড়ল মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার বনাম বাংলাদেশ সেনার দ্বন্দ্ব।দেশের বর্তমান অবস্থায় নাকি কাজ করতেই পারছেন না মুহম্মদ ইউনূস। তিনি নাকি পদ ছাড়তে চান।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের জল্পনা আগেই বেড়েছিল তাঁর একদা সহকর্মী নাহিদ ইসলামের কথায়। কিন্তু জল্পনার মুখেই তাঁর বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন, ইউনূস পদত্যাগ করবেন না। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। সেখানেই এ কথা স্পষ্ট করেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সেই ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করে দেন। শুধু তাই নয়, তাঁর সেই পোস্ট নিয়ে কোনও খবর প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অন্য একটি পোস্ট করেন। আগের পোস্টটি একান্তই তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’ ছিল বলেও দাবি করেন ফয়েজ। এরপরেই ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে জল্পনা আরও চরমে পৌঁছয়।
ইতিমধ্যেই মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ সেনার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে । বুধবার বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে, বিএনপির সঙ্গে গলা মিলিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান । আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশ গত ৯ মাস ধরে অভিভাবকহীন। এদিকে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে তারা। এই পরিস্থিতিতে ইউনূস দায়িত্ব ছাড়তে চান বলে খবর। বৃহস্পতিবার রাতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। তার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেছিলেন ইউনূস। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বলে খবর। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৈঠকেই ইউনূস নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। জানিয়ে দেন, সেখানে তিনি আর থাকতে চান না। এমনকি, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করতে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তা জানাতে চেয়েছিলেন ইউনূস। আপাতত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক ছিল। সেই বৈঠক শেষ হওয়ার পরেও ইউনূস তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা করেন। সূত্রের খবর, সেখানেই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রতি দিনের আন্দোলন, রাস্তা আটকে রেখে দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ নিয়ে তিনি সার্বিক ভাবে হতাশ। যে সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকার শুরু করেছিলেন, তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একমত হচ্ছে না। ফলে তিনি কাজ এগোতে পারছেন না। তাঁর কাজে নানা দিক থেকে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত সূত্রকে উল্লেখ করে প্রথম আলো জানিয়েছে, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন ইউনূস। ভাষণের খসড়াও এক পর্যায়ে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, দেশের মানুষের কাছে তা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণের সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়। পরে তা নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে।ইউনূস একাধিক বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়েও বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচন হলে তা আদৌ অবাধে এবং সুষ্ঠু ভাবে হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন খোদ প্রধান উপদেষ্টাই। সূত্রের খবর, ভোটে ব্যালট ছিনতাই আটকানো যাবে কি না, পুলিশ আদৌ ব্যালট ছিনতাই আটকাতে পারবে কি না, ইউনূস নিজেই তা নিয়ে সন্দিগ্ধ। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে ব্যর্থতা, কাঙ্ক্ষিত সংস্কারে ব্যর্থতার দায় তিনি নিতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে চলে আসেন। তার পর ইউনূসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এখন তারাই ক্ষমতায়। কথা ছিল, প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের পরেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে। এখনও কোনও নির্বাচন হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের উপর নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। আর সেই প্রেক্ষাপটেই দায়িত্ব ছাড়ার কথা ভাবছেন মুহাম্মদ ইউনূস।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement