কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার পরেও রাজ্যে কিভাবে উন্নয়নের ধারা জারি রয়েছে, সেকথাই উত্তরবঙ্গ থেকে আরও একবার বোঝালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে কড়া ভাষায় বিঁধলেন তিনি। মঙ্গলবার ফুলবাড়ি ডাবগ্রামে সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভায় তাঁর আমলে রাজ্যে কিভাবে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে, সেই খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা দেখতে পায় না।” মুখ্যমন্ত্রী এদিনের সভা থেকে দাবি করেছেন, বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজ্য কেন্দ্রের থেকে পাবে। কিন্তু সেই টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও বাংলার বাড়ি প্রকল্প, একশো দিনের কাজের টাকা রাজ্য নিজের পকেট থেকে দিয়েছে। এদিন সভা থেকে উন্য়নের খতিয়ান তুলে ধরে মমতা বলেন, “আগে ১২ লক্ষ, এখন ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি বানানোর টাকা দেওয়া হল। ২৮ লক্ষ মানুষ উপকৃত হলেন। ১৪,৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আরও ১৬ লক্ষ যোগ্য পরিবারকেও আমরা বাড়ি করে দেব।” ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে প্রশাসনিক সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সারা ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতে আমরা চালু করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনেকে অনেক কথা বলে। এত দেব, অত দেব। দাওনি কেন এতদিন ? বাঘে খেলেও তো দেখতে আসো না। আর বড় বড় ভাষণ ? লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সারা ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতে আমরা চালু করেছিলাম। সারাজীবন পর্যন্ত চলবে। মেয়েদের সম্মান, মা-বোনদের সম্মান। কেউ কেউ এখন থেকে বলছে এত দেব, অত দেব। নির্বাচনের আগে যা বলেছিল, দেয়নি। মুম্বইয়ে দেয়নি, মধ্যপ্রদেশে দেয়নি, রাজস্থানে দেয়নি। এরা ভোটের আগে একরকম বলে। ভোটের পরে ভুলে যায়। আমরা করি না । আমরা যা বলি, আমরা সেটা করি।” তাঁর সংযোজন, “আমরা চারটে কথা বলেছিলাম। জিতলে খাদ্যসাথী করব, করে দিয়েছি। দুয়ারে রেশন। আমরা যেটা বলেছিলাম, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করব। করে দিয়েছি। আমরা যেটা বলেছিলাম স্টুডেন্টদের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে স্মার্ট কার্ড করব। করে দিয়েছি। এভাবে যখন যেটা বলেছি, করে দেখিয়েছি। একটা জিনিস মনে রাখবেন, কথা থেকে কখনো সরে যাই না।” ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প এনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে বাড়ির মহিলাদের হাতে মাসোহারা ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসরদের জন্য আর একটু বেশি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা হয়। পরবর্তীতে তা আরও বাড়িয়ে সাধারণ মহিলাদের হাতে মাসে মাসে ১০০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসরদের জন্য ১২০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী সেই “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের সুবিধার কথা তুলে ধরেন এদিনের সভায়। কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জিএসটি কেন্দ্র সরকার সংগ্রহ করে, আমরা সাহায্য করি। সেই টাকাটাও আমরা ঠিকঠাক পাই না।” এসবের বাইরে শিল্পপতিদের উপর কর চাপাচ্ছে কেন্দ্র তার বিরোধিতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।পাশাপাশি, রাজ্য সরকার ‘বাংলা শস্য বিমা’ প্রকল্পের আওতায় ১ লক্ষেরও বেশি আলুচাষিকে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫৮ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। চলতি রবি মরসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যেসব কৃষকের আলু চাষে ক্ষতি হয়েছিল, তাঁদের এই সহায়তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এদিনের সভা থেকে একাধিক প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। ৯ কোটির বেশি ব্যয়ে বীরপাড়ায় হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। চা সুন্দরী প্রকল্পে মাদারিহাটে চা শ্রমিকদের জন্য ২৯৮টি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। মাদারিহাটে সেতু তৈরিতে ২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একাধিক প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সভা থেকে বলেন, “আমরা কথা দিলে কথা রাখি।” ডাবগ্রাম থেকে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘আমি দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই।’ এরপরই বিজেপির নাম না করে তোপ দেগে বলেন, “দাঙ্গা হলে রাজনীতির লোকেরা রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। আমি দাঙ্গা চাই না।”উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ফুলবাড়ি ডাবগ্রামে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে আসে দাঙ্গা প্রসঙ্গ। শান্তির বার্তা দিয়ে নাম না করে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে তোপ দাগেন মমতা। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা দাঙ্গা করে, তারা দাঙ্গা নিয়ে জন্মায়। তারা মানুষের ভালো চায় না। দাঙ্গা হলে ঘর জ্বলবে, মানুষ মরবে। রাজনীতির লোকেরা রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। আমি দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই।”