মধ্যরাতে প্রত্যাঘাত‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ধ্বংস ৯ জঙ্গি ঘাঁটি

IMG-20250507-WA0261

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার জবাব দিল ভারত। মধ্যরাতে পাকিস্তানের মাটিতে প্রত্যাঘাত হানল ‘অপারেশন সিন্দুর’। আর মাত্র ২৫ মিনিটের এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ধ্বংস হল জঙ্গিদের ৯টি ঘাঁটি।পহেলগাঁও হামলার ১৫ দিনের মাথায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। বালাকোটের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে এই প্রথম পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযান ভারতের।নয়াদিল্লিতে রাত জেগে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর উপর কড়া নজরদারি চালান খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। আর ধারাবাহিক ভাবে তাঁকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সরকারি ভাবে কিছু জানা না গেলেও এই অপারেশনে ৭০-৮০ জন জঙ্গিকে নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, এই হামলায় পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ভারত সরকার জানিয়েছে, সামরিক অভিযান হয়েছে খুব মেপে এবং গোয়েন্দাদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ধ্বংস করা হয়েছে জঙ্গিদের ঘাঁটি।রাত ১টা বেজে ৫ মিনিটে শুরু হয় অপারেশন সিন্দুর। রাত দেড়টার মধ্যে অভিযান শেষ হয়। মাত্র ২৫ মিনিটে ২৪ বার আঘাত হেনে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাক পঞ্জাবের ন’টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। যে নয় জায়গায় ভারতীয় সেনা প্রত্যাঘাত করেছে, তার চারটি জায়গা পাকিস্তানে এবং পাঁচটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। পাক পঞ্জাবের যে চারটি জায়গায় হামলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে এবং সিয়ালকোট এবং কোটলি। অন্য দিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্‌ফরাবাদ, গুলপুর, ভীমবের, চাক আমরু, বাগে হামলা চলেছে। সূত্রের খবর, বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রচুর সূত্র কাজে লাগিয়ে ন’টি জায়গা চিহ্নিত করেছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা। সূত্রের খবর, পহেলগাঁও হামলার পরেই ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরিকল্পনা সারা হয়ে গিয়েছিল। তারপরেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে আচমকাই অপারেশন চালায় ভারতীয় বাহিনী।
বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা। পাক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ভিডিয়ো দেখানো হয় এই সাংবাদিক সম্মেলনে। বিদেশ সচিব বিক্রিম মিস্রি জানান, জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন থমকে দেওয়াই এই হামলার লক্ষ্য ছিল। পহেলগাম হামলায় পাক জঙ্গি গোষ্ঠী টি আর এফের যোগ প্রমাণিত বলেও জানান তিনি। জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা হিসাবে পাকিস্তান গোটা বিশ্বে পরিচিত বলেও জানান বিদেশ সচিব।বিদেশ সচিবের কথায়, ‘পহেলগামে হামলার পর গোটা দেশে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল। ১৫ দিন ধরে পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাই মঙ্গলবার ভোর রাতে পাক জঙ্গিঘাঁটিতে নিয়ন্ত্রিত হামলা হয়েছে।’ জঙ্গিদের যথাযথ জবাব দিতে ভারত নিজের শক্তি প্রয়োগ করেছে বলে জানান তিনি।কর্নেল সোফিয়া কুরেশি দাবি করেন, রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে দেড়টার মধ্যে অপারেশন সিন্দুর চলে। পহেলগামে নিরপরাধ মানুষকে ন্যায়বিচার দিতেই এই অপারেশন। ৯ জঙ্গি ঘাঁটি ধূলিসাৎ করা হয়েছে। তিন দশক ধরে যথেষ্ট নজরদারির মধ্যেই পাকিস্তানে জঙ্গি-পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটি, জঙ্গি প্রশিক্ষণের জায়গা, হ্যান্ডলারদের লঞ্চ প্যাড রয়েছে।কর্নেল সোফিয়া জানান, একটি পাক সেনা ঘাঁটিকেও নিশানা করা হয়নি। একজন নাগরিকেরও ক্ষতি হয়নি। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার জবাব পাকিস্তানকে ভারত নিজের পছন্দের সময়ে এবং পছন্দের স্থানে দেবে বলে ন‍য়াদিল্লির তরফে আগেই বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আঘাত হানে ভারতীয় বাহিনী। যদিও ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশ করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে কোনও শহরের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে মন্ত্রকের দাবি, যে সব জায়গায় বসে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত হেনেছে। এও জানানো হয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। যদিও ভারতের হামলার পরেই পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের এই হামলার পর চুপ থাকবে না পাকিস্তান। যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement