পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমশ চড়ছে উত্তেজনার পারদ।প্রত্যাঘাতের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে ভারতে।প্রস্তুতিও চলছে জোরকদমে। একের পর এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।এই আবহে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, সেই সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করতে আজ বুধবার দেশ জুড়ে অসামরিক মহড়া হতে চলেছে। সারা ভারতের সঙ্গে এ রাজ্যের একাধিক জায়গায় ওই মহড়া হবে। কলকাতা সহ রাজ্যের ২৬ জায়গায় মক ড্রিল হবে। কলকাতা, কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদা, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাসিমারা, বার্নপুর-আসানসোল, ফরাক্কা-খেজুরিয়াঘাট, চিত্তরঞ্জন, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, খড়গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদে আজ মক ড্রিল হতে চলেছে। এই মক ড্রিলের ব্যাপারে সোমবারই কেন্দ্রের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়।
দেশের সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে মূলত বিমান হামলা হলে কী ধরনের পদক্ষেপ করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলিকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, আগামী বুধবারের মহড়ায় খতিয়ে দেখে নিতে হবে যে, বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কি না। পাশাপাশি রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের খবর পাওয়া মাত্র যাতে হঠাৎ করে সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়, তারও মহড়া সেরে রাখতে বলা হয়েছে।এর পাশাপাশি, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহে সম্ভাব্য হামলা থেকে যথাসম্ভব ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো আগে থেকেই ঢেকে দেওয়া বা সেগুলিকে যথাসম্ভব লুকিয়ে ফেলার প্রস্তুতিও সেরে রাখতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার।
সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে নাগরিক ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, হামলার সময়ে বা জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের যথাসম্ভব সমন্বয় রেখে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রশ্নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বানিয়ে তা অভ্যাস করে রাখতেও বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। এ জন্য জেলাশাসক, অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ডদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে এই মহড়ায়। এছাড়া নাগরিক, পড়ুয়াদের নাগরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকলের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। হঠাৎ আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’-এর মহড়াও চলবে। জরুরি অবস্থায় দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং তা অনুশীলন করা হবে এই মহড়ায়। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই প্রথম দেশজুড়ে এমন অসামরিক মহড়া হতে চলেছে। ২০১৯ সালে উরি হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের সময়ও এমন নির্দেশ জারি করা হয়নি। তার আগে কার্গিল যুদ্ধের সময়েও এমন কিছু হয়নি। অর্থাৎ ১৯৭১-এর পর ফের ২০২৫ সালে আমজনতার জন্য অসামরিক মহড়ার নির্দেশিকা জারি হল। স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা তুঙ্গে, এবার যুদ্ধের পথে ভারত?