রানাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এনআইএ’র

IMG-20250411-WA0219

মুম্বইয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল এনাইএ। তাহাউর রানাকে বৃহস্পতিবারই আমেরিকা থেকে বিমানে করে ভারতে নিয়ে আসা হয়। তারপরেই তাকে এনআইএ-র আধিকারিকেরা গ্রেফতার করেন। আপাতত ১৮ দিনের জন্য রানাকে হেফাজতে পেয়েছে তারা। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। রানাকে জেরার জন্য এনআইএ-র সদর দফতরে বিশেষ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে এনআইএ-র ১২ জন শীর্ষ আধিকারিক এই জেরা করবেন। রানাকে জেরা করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছেন এনআইএয়ের আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার রাতেই রানাকে এনআইএ-র বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিল। সেখানে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করে তদন্তকারী সংস্থাটি। ২০ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়। তবে ১৮ দিনের জন্য তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রানাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে ১৯৬ বর্গফুটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, পুরো সেলটি সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সিসিটিভির মাধ্যমে সর্ব ক্ষণের জন্য নজরদারিতে রাখা হয়েছে রানাকে। প্রতি ৪৮ ঘণ্টা অন্তর তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। রানা যাতে কোনও ভাবে নিজের ক্ষতি করতে না পারে, তার জন্য বিশেষ সতর্কতাও নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাক বংশোদ্ভূত হলেও কানাডার নাগরিক রানা। দীর্ঘ দিন লস অ্যাঞ্জেলেসে বন্দি ছিলেন তিনি। তাঁকে ভারতে ফেরানো এবং বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে এনআইএ-র সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। অভিযোগ, পাক বংশোদ্ভূত আর এক সন্ত্রাসবাদী ডেভিড হেডলির সঙ্গে রানার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। তাঁরা দু’জনেই ২৬/১১ হামলার ছক কষেছিলেন। রানার যোগাযোগ ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সঙ্গেও। মুম্বই হামলার কিছু দিন আগে ভারতে এসেছিলেন রানা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী-ও। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে এই ভারত সফর, লশকর-এ-ত্যায়বা এবং হেডলির প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে। সূত্রের খবর, ২৬/১১ হামলা সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অজানা তথ্য মিলতে পারে রানার কাছ থেকে। সূত্রের খবর, যে সেলে রানাকে রাখা হয়েছে সেখানে শোওয়ার জন্য একটি বিছানা দেওয়া হয়েছে। রয়েছে একটি শৌচাগারও। এ ছাড়াও বহুস্তরীয় ডিজিটাল নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাহারা দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা ওই সেলের সামনে এক জন নিরাপত্তারক্ষীকে মোতায়েন করা হয়েছে। রানাকে জেরার জন্য ১২ জনের একটি দল গঠন করেছে এনআইএ। একমাত্র ওই দলের সদস্যদেরই রানার সেলে ঢোকার অনুমতি রয়েছে। সূত্রের খবর, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে প্রথম পর্বের জেরা শুরু হয়েছে। যে ঘরে তাঁকে জেরা করা হচ্ছে সেই ঘর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া। ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ের জন্য নানা যন্ত্রপাতি রয়েছে। প্রতি দিন কী কী জেরা করা হচ্ছে, কী উত্তর পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রতি দিন লিপিবদ্ধ করা হবে। এনআইএ সূত্রের খবর, প্রথম পর্বের জেরায় রানার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন সম্পর্কে তথ্য জানার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। তাঁর বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, পরিবার, কেরিয়ার, কী ভাবে চিকিৎসক থেকে সন্ত্রাসবাদের জগতে প্রবেশ, সব কিছুই এই পর্বে জানার চেষ্টা হবে। উল্লেখ্য, গ্রেফতারের ১৬ বছর পর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, তাঁকে নিয়ে ভারতে বিমান নামার পরই গ্রেফতার করবে এনআইএ। তার পর তাঁকে ভার্চুয়ালি আদালতে পেশ করা হবে। নেওয়া হতে পারে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। সূত্রের খবর, রানাকে প্রাথমিক ভাবে তিহাড় জেলে রাখা হবে। রানাকে ভারতের প্রত্যর্পণের পুরো প্রক্রিয়াটি নজর রেখেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এ ছাড়া এনআইএ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকেরাও বিষয়টিতে যুক্ত ছিলেন। ৬৪ বছরের রানা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যানের সঙ্গে এক ব্যবসার সূত্রে আলাপ হয় রানার। ২০০৮ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের স্থান নির্বাচন করেছিলেন ডেভিড। ওই বছর ২৬ নভেম্বর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতে লশকর-এ-ত্যায়বা মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই ঘটনায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। জখম হন আরও অনেকে। ২০০৯ সালে শিকাগোয় ধরা পড়েন ডেভিড। তদন্তে জানা যায়, রানার সাহায্যেই ভারতে এসেছিলেন ডেভিড। জঙ্গিরা কোন পথে এ দেশে ঢুকে হামলা চালাবে তাঁর রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন। পরে আমেরিকায় গ্রেফতার হন রানা। এর পরই তাঁকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় ভারত।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement