অতিরিক্ত শূন্যপদ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ

IMG-20250408-WA0264

অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরী মামলায় সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি রাজ্যের। অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। মঙ্গলবার সেই নির্দেশ খারিজ করে দিল খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদনও নেওয়া হয়। সেই কারণে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরে হঠাৎ স্কুলের চাকরিতে প্রায় ৬ হাজার বাড়তি পদ তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা আন্দোলনরতদের জন্যই ওই পদ তৈরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে সম্মতি দিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রিসভাও। গত বছর এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, সুপার নিউমেরারি পদ তৈরি করার বিষয়টির তদন্ত করবে সিবিআই। কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশও দিয়েছিল, প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।তবে মঙ্গলবার সেই কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।মঙ্গলবার শুনানি শুরু হলে হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। ফলে এই মামলায় স্বস্তি পেল পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, সুপার নিউমেরারি পদ তৈরির সময় বলা হয়, কলকাতা হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ের উপর নির্ভর করবে সবকিছু। স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছিল, মন্ত্রিসভার বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা বলা হয়। তাহলে কেন অতিরিক্ত শূন্যপদ বেআইনি ভাবে তৈরি বলা হচ্ছে? প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, বিজ্ঞপ্তিতে যখন কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। ২০২২ সালে মামলার শুনানি চলছিল, ওয়েট লিস্টে থাকা প্রার্থীদের জায়গা দেওয়ার জন্যই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়। এসএসসির তরফেই অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সুপারিশ আসে। এসএসসি এমন অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির আবেদন জানাতেই পারে। সেই মতো বিজ্ঞপ্তি তৈরি করতে পারে রাজ্যের মন্ত্রিসভা। ফলে নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি।  
শুনানি চলাকালীন সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কেন দিল, সেই নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার সময় কেউ মন্ত্রিসভার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাননি। তাহলে কেন হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল, প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। এর পাশাপাশি, আদালত জানায়, রাজ্যের মন্ত্রিসভার কিছু স্বতন্ত্র ক্ষমতা রয়েছে। যৌথ ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে। রাজ্যের মন্ত্রিসভার সব সিদ্ধান্তকে এভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না। কারণ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, হাইকোর্টের রায়ের ওপর চাকরিপ্রাপকদের ভাগ্য নির্ভর করবে।  রাজ্যপালের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল, তাই আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তাই কলকাতা হাইকোর্টের CBI তদন্তের নির্দেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত। ২০২২ সালেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের প্রেক্ষিতে কিছু ‘অযোগ্যে’র চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। ওই সময়েই প্রায় ছ’হাজারের কাছাকাছি ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা দফতর। ৫ মে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ওই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে যে, বেআইনি ভাবে নিযুক্তদের বাঁচানোর জন্যই সুপারনিউমেরারি বা অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছিল। ওই মামলার শুনানিতে তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে যায়। গত বছরের ২২ এপ্রিল বিশেষ বেঞ্চও জানায়, সুপারনিউমেরারি পদ তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। সিবিআই প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলেও জানিয়েছিল হাই কোর্টের ওই বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি খান্নার বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দিল।এই মামলায় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, ‘রাজ্য সরকারের ক্যাবিনেট বৈঠকের সিদ্ধান্ত বৈধ কি না, তা ঠিক করবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি? এটাই কি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো?’। স্বাভাবিক ভাবেই এই সুপ্রিম নির্দেশে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে, সে খবর পৌঁছোয় শহিদ মিনারে অবস্থানরত চাকরিহারাদের কাছেও। রায় প্রসঙ্গে তাঁদের এক সদস্য বলেন, “সুপারনিউমেরারি পদ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য ছিল না। এটা আদালতের বিচার্য। কিন্তু আমরা এটা দেখলাম যে, যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের তেমন শাস্তি হল না। অন্য দিকে, আমরা যারা যোগ্য, দুর্নীতি না-করেই চাকরি পেয়েছি, শাস্তি তাদেরই হল।”

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement