রামনবমী ঘিরে দিনভর সরগরম রাজ্য

IMG-20250406-WA0334

কোথাও অস্ত্রের ঝনঝনানি, কোথাও সম্প্রীতির নজির
ছাব্বিশের ভোটের আগে হিন্দুত্বে শান দিয়ে রামনবমীতে শক্তি প্রদর্শন করল বিজেপি।আর সেই শক্তি প্রদর্শনে শহর থেকে শহরতলিতে মিছিল করল গেরুয়া শিবির।বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দেখা গেল জেলায় জেলায়।পাল্টা মিছিল করে রামনবমীতে অংশ নিতে দেখা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকেও।বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়ে উৎসবে শামিল হলেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরাও। আর কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কারে রবিবার দিনভর সরগরম রইল গোটা বাংলা।
রামনবমী উপলক্ষ্যে রবিবার নানা হিন্দু সংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিলের আয়োজন করতে দেখা যায়। সেই মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায় বিজেপির প্রথম সারির নেতা-নেত্রীদের।সকাল থেকেই শোভাযাত্রার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বেলা গড়াতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে যায় মিছিল। কোথাও মিছিলে লক্ষ্য করা অস্ত্রের ঝনাঝনানি। কোথাও আবার সম্প্রীতির নজিরও লক্ষ্য করা যায়। রামনবমীতে রাজ্যের জেলায় জেলায় অস্ত্র মিছিলের পাশাপাশি ধরা পড়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ছবিও।
এদিন মালদহে সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়ে। রামনবমীর মিছিল এগিয়ে আসতেই দু’পাশ থেকে সংখ্যালঘু মুসলমানরা ফুল ছুঁড়তে শুরু করেন। নিজে হাতে মিষ্টি খাইয়ে দেন মিছিলে আগত রামভক্তদের। একে অপরকে জড়িতে ধরে সম্প্রীতির বার্তাও দেওয়া হয়। সম্প্রীতির একই ছবি দেখা যায় মালদাতেও। রাম নবমী উদযাপন কমিটির তরফে মালদার ইংরেজবাজার শহরের রামকৃষ্ণপল্লী পল্লিশ্রী মাঠ থেকে শুরু হয় মিছিল। সেই মিছিল নেতাজি মোড়, পোস্ট অফিস মোড় থেকে গৌড় রোড, ইংরেজবাজার থানার সামনে দিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে মিছিল শেষ হয়। পোস্ট অফিস মোড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রামনবমীর মিছিলে অংশগ্রহনকারীদের জল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুকে মিষ্টি মুখ করান মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। রাম নবমী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা খুব ভালো লাগছে এবং গর্ব বোধ হচ্ছে। আমরা মালদা জেলাতে সম্প্রীতি রক্ষার বার্তাটাই দিতে চাই।’
রবিবার সকাল থেকেই রাজ্য জুড়ে রামনবমী পালন শুরু হয়ে যায়। কোথায় বিজেপি, কোথায় শাসক তৃণমূলের নেতারা শোভাযাত্রায় যোগ দেন। নন্দীগ্রামে রামনবমীর মিছিলে যোগ দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। খড়্গপুরে কর্মসূচি করেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। আবার বীরভূমের সিউড়িতে মিছিলে হাঁটেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। মালদহের ইংরেজ বাজারে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সকালে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে রামনবমীর শুভেচ্ছা জানান। সেইসঙ্গে শান্তি, সম্প্রীতি রক্ষারও বার্তা দেন তিনি। বিরল দৃশ্য দেখা যায় বীরভূমেরই দুবরাজপুরে। সেখানে রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে শোভাযাত্রায় একসঙ্গে হাঁটে তৃণমূল এবং বিজেপি। ‘জয় শ্রীরাম সেবা সমিতি’র আয়োজনে দুবরাজপুরের রামসীতা মন্দিরপ্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বার হয়েছিল। সেই শোভাযাত্রায় হাঁটলেন দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপকুমার সাহা, জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক টুটুন নন্দী, বিজেপির দুবরাজপুর শহর সভাপতি দেবজ্যোতি সিংহ। হাঁটলেন জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়, দুবরাজপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পীযূষ পাণ্ডেও। হাওড়ার সালকিয়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে হাঁটলেন উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমি এলাকার সব ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। আজ ওরা ডেকেছিল। তাই গিয়েছি।’’ এ নিয়ে তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা বিজেপির পাতা ফাঁদ হতে পারে। কারণ এই মিছিলের উদ্যোক্তা ছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই। আমরা গৌতম চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলব।’’ রামনবমীর দিন সম্প্রীতির ছবি দেখা বীরভূমের নানা জায়গায়। গণহত্যার জেরে শিরোনামে উঠে এসেছিল রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। সেখানেই রামনবমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় মিষ্টি-জল বিতরণ করলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। অন্যদিকে, রাজনৈতিকভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও দুবরাজপুরে রামনবমী মিছিলে পা মেলান তৃণমূল-বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এসবের মধ্যেও বীরভূমের সিউড়িতে আবার অস্ত্র হাতে মিছিল করতে দেখা যায়।পুলিশ সেই অস্ত্র বাজেয়াপ্তও করে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement