কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের ফলে প্রায় ২৬ জনের চাকরি চলে গিয়েছে। অযোগ্যদের পাশাপশি অনেক যোগ্য শিক্ষকেরও চাকরি বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ওই চাকরি বাতিল রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আবার বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়ে আজই নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কোনও দিশা দেখাতে পারেন কিনা, সেই দিকে তাকিয়ে চাকরিহারারা। শীর্ষ আদালতের রায়ের পর দিশাহারা চাকরিহারারা। চাকরিহারা যোগ্য’ শিক্ষকরা নিজেদের অধিকারের দাবিতে আজ সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে সমাবেশ করবেন। তাঁদের পাশে থেকে সেই সমাবেশে যোগ দেবেন বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিভাবে বঞ্চিত অথচ যোগ্যদের পথ দেখানো যায়, সেই নিয়ে আজ বার্তা দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে, সেই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও পথ বাতলে দিতে পারেন কিনা, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন চাকরিহারারা। সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েও কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ হবে। এই দুঃসময়ে যাতে কেউ ভেঙে না পড়েন, সেই মানবিক সমর্থন জানাতেই তাঁর আজকের সমাবেশে যোগদান। মনে করা হচ্ছে, ওইদিন পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখাও ঠিক করবেন চাকরিহারারা। ২০১৬ সালের এসএসসি-র শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল। এর ফলে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে শেষ হয়েছিল এই মামলার শুনানি। বৃহস্পতিবার সকালে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের রায় বহাল রেখে ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।এর ফলে চাকরি হারান প্রায় ২৬ হাজার জন। প্রাথমিক শুননির পরে গত বছরের ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিতে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খান্না। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, তা-ও জানতে চান তিনি। তখন মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, অনেকে চাকরির আবেদন না করেও নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান বিকাশ। সেই সঙ্গে নিয়োগের পুরো প্যানেলই বাতিল করার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করে ২০১৬ সালের গোটা প্যানেলই বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ায় অযোগ্যদের পাশাপাশি যোগ্যরাও চাকরিহারা হয়েছেন। এই অবস্থায় চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।