দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউনূসকে কড়া বার্তা মোদীর

IMG-20250404-WA0248

বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার থাইল্যান্ডে বৈঠক হয় দুই রাষ্ট্রনেতার। সেই বৈঠকে উঠে আসে নানা বিষয়। বাংলাদেশে বেলাগাম হিন্দু নির্যাতন নিয়ে ইউনূসকে কড়া বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্য নিয়ে ইউনুস যে উস্কানিমূলক মন্তব্য রেখেছেন তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত এবং ইউনূস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে বৈঠক হল। বেজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার মধ্যে এই বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য এড়িয়ে চলার বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে সতর্ক করেছেন মোদী। এ ছাড়া বাংলাদেশী হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে ভারত যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেকথাও বৈঠকে জানান মোদী। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাঙ্ককের রাজধানী তাইল্যান্ডে বিমস্টেক সম্মেলনের নৈশভোজে পাশাপাশি বসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে তেমন বাক্যালাপ করতে দেখা যায়নি। তবে শুক্রবার দ্বিপাক্ষিক পার্শ্ববৈঠকে হাসিমুখেই সৌজন্য বিনিময় করেন তাঁরা। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের জেরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। সেই থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী ভারতেই রয়েছেন, যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদাধিকারীরা নয়াদিল্লিকে নিশানা করেছেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিক ঘটনাও নয়াদিল্লি-ঢাকা টানাপড়েনের অনুঘটক হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে চিনে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একাধিক চুক্তি করে এসেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তাই ব্যাঙ্ককে আদৌ মোদী-ইউনূস বৈঠক হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল কূটনীতিকদের অনেকের মনেই। শেষ পর্যন্ত জল্পনার অবসান ঘটালেন দুই রাষ্ট্রনেতা। বৈঠকের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় ভারত। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিবেশ নষ্ট করে এমন যে কোনও বক্তব্য এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’ ব্যাঙ্ককে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। শুক্রবার এই দাবি করেছেন ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শফিকুল বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যতগুলি বিষয় রয়েছে, তার সব ক’টি নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব ক’টি বিষয়ই আলোচনায় তুলেছেন। আলোচনায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, ভারতে বসে তিনি যে সব উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন সে প্রসঙ্গ, সীমান্ত-হত্যা বন্ধ, গঙ্গাজল চুক্তির পুনর্নবীকরণ এবং তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’’ গত ৫ অগস্ট গণঅভ্যুত্থানের জেরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীপদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। সেই থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী ভারতেই রয়েছেন, যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদাধিকারীরা নয়াদিল্লিকে নিশানা করেছেন। গত ডিসেম্বরে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছিল ঢাকা। গত মাসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ়কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইউনূস জানিয়েছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনপর্বে খুনের অভিযোগ-সহ মানবতা বিরোধী একাধিক মামলায় হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদালতে হাসিনার সশরীরে উপস্থিতির জন্য বিচারপ্রক্রিয়া আটকে থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘হাসিনা বাংলাদেশে থাকুন বা না থাকুন, উনি ভারতে থাকা অবস্থাতেও আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে দিতে পারি।’’

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement