নিয়োগ প্রক্রিয়া ৩ মাসে শেষ সম্ভব নয়, জানাল এসএসসি

IMG-20250404-WA0238

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫২ জন। তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়স্কুল সার্ভিস কমিশন। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানান এসএসসি’র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তবে তিন মাসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন এসএসসির চেয়ারম্যান।তিনি বলেন, “রাজ্যের তরফে চিঠি পেয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিয়োগের কাজ শুরু হবে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হবে।” এসএসসির চেয়ারম্যান আরও জানান, সরকারের থেকে দ্রুত নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণের চিঠি পেয়েছেন। এই বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করা হবে। তবে তার আগে আইনি পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলেও জানায় এসএসসি। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনার কাজ শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।তবে তিনমাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এসএসসি চেয়ারম্য়ান। সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, নির্দেশ মেনে যাঁরা আইনের চোখে দাগি নন, তাঁদের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু ছাড় দেওয়া হবে। অর্থাৎ বয়সের ক্ষেত্রে খানিকটা ছাড় মিলবে। তবে এই মুহূর্তেই নিয়োগ সংক্রান্ত কাজ শুরু সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, আদালতের নির্দেশ নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে। নতুন প্রার্থীরা আদৌ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন কিনা, তা নাকি জানা নেই এসএসসির। ফলত এহেন একাধিক বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে হবে। তারপরই শুরু হবে নিয়োগের কাজ। সিদ্ধার্থবাবু জানিয়েছেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে নিয়োগের প্রক্রিয়া।৩ মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব কি না, সেই বিষয়ে এসএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যার উপরে নির্ভর করে। ২০১৬ সালের এই প্যানেলে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ সি-ডি মিলিয়ে প্রায় ২৬ লক্ষ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। ২২ লক্ষ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। প্রার্থী সংখ্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিয়োগ নির্ভরশীল। ৩ মাসের মধ্যে নিয়োগ করতে হবে, তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোথাও উল্লেখ নেই। এটি বড় প্রক্রিয়া। ৩ মাসে সম্ভব নয়।’
সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থী অন্যান্য দপ্তরের সরকারি চাকরি ছেড়ে এই চাকরিতে এসেছিলেন, তাঁরা পুরোনো চাকরিতে ফেরত যেতে পারবেন। এই পদ্ধতি প্রসঙ্গে SSC-র চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেউ অন্য চাকরি থেকে এই চাকরিতে এলে সেই তথ্য আমাদের কাছে আছে কি না, তা বলা মুশকিল। যিনি চাকরিপ্রার্থী তিনি বিষয়টি জানবেন। তিনি আবেদন করতে পারবেন। আমাদের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন এমনটাও নয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনে সুপার নিউমেরারি পোস্টও তৈরি করতে হবে।’ উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল, কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বাতিল হয়েছিল ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কোর্টের কলমের খোঁচায় চাকরি হারিয়েছিলেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মী। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শীর্ষ আদালতে দফায় দফায় সেই মামলার শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি বাতিল এবং বেতন ফেরতের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। তারপর থেকে দফায় দফায় শুনানি চলছিল।গত ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল শেষ শুনানি। তখন সিবিআই জানায়, তারা চাইছে, কলকাতা হাই কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় বহাল থাকুক। স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, র‌্যাংক জাম্প বা প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য তাদের কাছে নেই। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, একসঙ্গে এতজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হলে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। সবপক্ষের সওয়াল শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত রায় শোনান তিনি। বাতিল করেন ২৫,৭৫২ হাজার চাকরি।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement