বঞ্চিত ও যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে শিক্ষামন্ত্রী

IMG-20250404-WA0249

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের রায় সামনে আসার পরেই বঞ্চিতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার আরও সেই আশ্বাসই শোনা গেল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গলায়। তিনি জানিয়েছেন, বঞ্চিত এবং যোগ্যদের পাশে থাকবে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সেই অনুযায়ী সবর্তোভাবে আমরা বঞ্চিত এবং যোগ্য যাঁরা আছেন, তাঁদের পাশে আমরা সর্বতোভাবে থাকব। মানবিকভাবে থাকব, রাজনৈতিকভাবেও থাকব।” শুধু তা-ই নয়, সমস্ত শিক্ষকের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “ভরসা রাখুন।” শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আজ তো স্কুল সার্ভিস কমিশনও সাংবাদিক বৈঠকে করেছে। ফলে, যা মূল কথা লিগ্যাল বা টেকনিক্যাল ক্ল্যারিফিকেশন তো ওরাই দেবে। আমি যেটা আমার বিভাগীয় দায়িত্ব থেকে বলতে পারি যে, মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সেই অনুযায়ী সবর্তোভাবে আমরা বঞ্চিত এবং যোগ্য যাঁরা আছেন, তাঁদের পাশে আমরা সর্বতোভাবে থাকব। মানবিকভাবে থাকব, রাজনৈতিকভাবেও থাকব’। ব্রাত্য বসু আরও বলেন, এই যে যোগ্য বা অযোগ্যদের কথা বলা হচ্ছে, একদলের বেতন ফেরত দেওয়া হবে, আর একদলের বেতন ফেরত দেওয়া হবে না, এই কথাগুলো তো আমার কথা নয়। এগুলো প্রধান বিচারপতির রায়ে বেশ কয়েকটি পাতায় আছে। ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে খুব স্পষ্ট করে আছে। তাহলে যে রায় বলছে যে, টেন্টেড বা আনটেন্টেড, সেটা তো এসএসসি-র দেওয়া তথ্য বা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই বলা হচ্ছে। তাহলে আপনারা যেটা বলছেন যে, যোগ্য বা অযোগ্য এসএসসি ভাগ করতে পারেনি তা নয়। হয়তো কোর্ট তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কিন্তু যোগ্য-অযোগ্যর একটা ভাগাভাগি আমরা নিশ্চিতভাবে প্রধান বিচারপতির রায়ের পর আমরা বুঝতে পারছি। যাঁরা যোগ্য এবং বঞ্চিত, তাঁদের প্রতি একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যাতে সব তরফ থেকে বেরোয়, আমি সেই আবেদনও এই সূত্রে করব। সমস্ত শিক্ষককে বলব, ভরসা রাখুন।” তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা যোগ্য এবং বঞ্চিত তাঁদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সব তরফ থেকে করা হয়, সেই আবেদনও করব।’ এই রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হবে কিনা, তা নিয়ে ব্রাত্য জানান, সেই সিদ্ধান্ত এসএসসির। যদি শিক্ষা দপ্তরের থেকে পরামর্শ চাওয়া হয় সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শ নিয়ে তা জানানো হবে।চাকরিহারাদের মধ্যে ‘১৭ হাজার জন স্কুলে যাচ্ছেন না’ এই তথ্য সঠিক নয় বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই তথ্য সঠিক নয়। আমাদের কাছে এই তথ্য নেই যে তাঁরা স্কুলে যাচ্ছেন না। তবে তাঁরা স্কুলে যেতে পারেন কিনা, তা আমি বলতে পারি না। এসএসসি জানিয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের থেকে ‘লিগ্যাল ক্ল্যারিফিকেশন’ বা আইনি ভাবে রায়ের ব্যাখ্য চাইবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে মানবিক বার্তা দিয়েছেন তার উপরে সমস্ত শিক্ষককে ভরসা রাখতে বলব।’ উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল, কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বাতিল হয়েছিল ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কোর্টের কলমের খোঁচায় চাকরি হারিয়েছিলেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষককর্মী। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শীর্ষ আদালতে দফায় দফায় সেই মামলার শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি বাতিল এবং বেতন ফেরতের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। তারপর থেকে দফায় দফায় শুনানি চলছিল।গত ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল শেষ শুনানি। তখন সিবিআই জানায়, তারা চাইছে, কলকাতা হাই কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় বহাল থাকুক। স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, র‌্যাংক জাম্প বা প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য তাদের কাছে নেই। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, একসঙ্গে এতজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হলে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। সবপক্ষের সওয়াল শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত রায় শোনান তিনি। বাতিল করেন ২৫,৭৫২ হাজার চাকরি।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement