কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে থাকাকালীন তিনিই এসএসসির দুর্নীতি সামনে এসেছিল। তিনিই দুর্নীতির অনুসন্ধানে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। চাকরি বাতিলের পর কলকাতা হাইকোর্টের সেই প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ই চাকরিহারাদের বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কমিটি গঠনের আবেদন জানালেন। তাঁর দাবি, ‘এখনও যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব’। বিজেপি সাংসদের মতে, “আমি যতদূর বুঝেছি, যাঁরা জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছেন এবং যাঁরা সত্যি সত্যি সৎভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি করতে এসেছেন তাঁদের আলাদা করা আজও সম্ভব।” অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে আজ আমি দিদি বলেই সম্বোধন করব। যেহেতু, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে বলছি। দিদি এই মুহূর্তে যেন একটি কমিটি গঠন করেন। আমি মনে করি, আমি যতদূর জানি, আমি যতদূর বুঝেছি, যাঁরা জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছেন এবং যাঁরা সত্যি সত্যি সৎভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি করতে এসেছেন তাঁদের আলাদা করা আজও সম্ভব’। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সংযোজন, ‘আমি কাউকে দোষারোপের প্রশ্নে যাব না আজ। আজ যাওয়ার সময় নয়। এই যে ছেলেগুলোর ভাগ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, এখান থেকে ওঁদের উদ্ধার করতেই হবে। আমরা ওঁদের চেয়ে বয়সে অনেক বড়। আমি বলব, একটি কমিটি গঠন করুন। যাঁর মাথায় চেয়ারম্যান হিসাবে শিক্ষামন্ত্রী থাকতে পারেন, যেখানে অ্যাডভোকেট জেনারেল থাকতে পারেন। যেখানে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য থাকতে পারেন। যেখানে আমি থাকতে পারি এবং যাঁরা মূল মামলাগুলি করেছিলেন সেই সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, বিক্রম ব্যানার্জি এবং ফিরদৌস শামিম, এঁরা থাকতে পারেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং তাদের আইনজীবী থাকতে পারেন। এটা করে যদি আমরা আলোচনা করে এবং ওগুলো বের করে যদি আমরা একটা তালিকা তৈরি করতে পারি, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্তভাবে চাকরি পেয়েছেন …আমি আজ আবার বলছি, আজ কাউকে দোষ দিতে চাই না। এসব দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের কাজগুলো করতে হবে। ২৬ হাজার ছেলেদের বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে হবে। আমরা লিস্টটা তৈরি করে ফেলতে পারব বলে আমি আজও মনে করি।” কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে থাকাকালীন তিনিই এসএসসি দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা। সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুক্রবার দাবি করছেন, এখনও যোগ্য-অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব। প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদের দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে অবশ্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “আমি ওঁর কথার জবাব দিতে চাই না। বিচারপতি হিসাবে পদত্যাগ করে বিজেপির প্রার্থী হয়ে লোকসভায় নির্বাচিত হয়ে…তিনি এ সম্পর্কে যত কম কথা বলেন ততই ভালো।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবির প্রেক্ষিতে আইনজীবী সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এসব বলে কোনও লাভ নেই।’ তৃণমূল সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘সমাধান একমাত্র সম্ভব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিত পথেই। শীর্ষ আদালতের রায়ের কোনও রিকনসিলিয়েশন হয় না। বিজেপি নেতারা কী বললেন তা অর্থহীন।’