ঢোলাহাটে বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত

IMG-20250402-WA0334

সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাটে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। এবার সেই বিস্ফোরণ কাণ্ডে বাজি ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত বণিককে গ্রেফতার করল পুলিশ।পুলিশ সূত্রে খবর, ঢোলাহাটের জুমাইনস্কর থেকে বুধবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও এখনও খোঁজ নেই চন্দ্রকান্ত বণিকের ভাই তুষারকান্তি বণিকের। মজুত বাজি ফেটে বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনায় দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স ছিল চন্দ্রকান্ত বণিক ও তুষার বণিকের কাছে। পঞ্চায়েতে আবেদন করে এই লাইসেন্স পেয়েছিল তারা। লাইসেন্স ছিল বড়ভাই চন্দ্রকান্তের স্ত্রী সান্ত্বনা বণিকের নামে। তবে সূত্রের খবর, বাজির জন্য কোনও ধরনের বৈধ লাইসেন্স ছিল না। ২০২২ সালে গ্রেফতার হয়েছিল চন্দ্রকান্তকে। যদিও অল্পদিনেই জামিন পেয়ে যায় সে। জামিন পাওয়ার পর মাত্র কয়েক’শ টাকার বিনিময়ে সেই ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করায় সে। ঘটনা পর থেকেই পলাতক ছিল চন্দ্রকান্ত বণিক। বুধবার ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাটে বাজি বিস্ফোরণে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবসায়ী পরিবার ও প্রশাসন দু’পক্ষেরই চরম গাফিলতি সামনে আসছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বাসন্তী পুজোর জন্য প্রচুর বাজির বরাত পেয়েছিল দক্ষিণ রায়পুরের বণিক পরিবার। অর্ডারমতো সেই সব বাজি তৈরির কাজও শেষ হয়েছিল। সূত্রের খবর, যে বাড়িতে বাজি ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত বণিক ও তুষার বণিকের পরিবার থাকত, তার চারটি ঘরের তিনটিতেই তৈরি হয়ে যাওয়া ওই সব বাজি মজুত করা হয়েছিল। এমনকি তার মধ্যে প্রচুর শব্দবাজিও ছিল। জানা গিয়েছে, যে খাটে একেবারে কোলের শিশুকে শোওয়ানো হত, সেই খাটের নীচেও মজুত করা ছিল প্রচুর বাজি। বাড়ির অদূরেই রয়েছে ১০ ফুট বাই ১২ ফুটের কারখানা। পুলিশের অনুমান, সেখানে জায়গা না কুলনোয়, অর্ডারের বিপুল বাজি ঘরের ভিতরে মজুত করেছিল বণিক পরিবার। আর এখানেই উঠছে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন। পুলিশ সূত্রে খবর, শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও বাজি তৈরির জন্য় কোনও লাইসেন্স ছিল না বণিক ভাইদের। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশের নাকের ডগায় এই কারবার তাহলে রমরমিয়ে চলল কী করে? এলাকায় একটা বাড়ির ভিতরে অসচেতনভাবে এত বাজি মজুত করা হল, তাও কী টের পায়নি পুলিশ? পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৪ মার্চ মহেশতলার বাটানগরে বাজি নির্মাতা ও বিক্রেতাদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নিয়েছিলেন বাজি ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত বণিক। বাজির বিপদ সম্পর্কে সব জেনেও কীভাবে তিনি নিজের বাড়িতেই বিপুল বাজি মজুত করলেন, তা নিয়ে বিস্মিত পুলিশ। ঢোলাহাটে ভয়াবহ বাজি বিস্ফোরণের আট জনের মৃত্যুর পর ঘটনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের থেকে রিপোর্ট তলব করেছিল নবান্ন। সেই রিপোর্টে লাইসেন্সের বিষয়টি সামনে আসতেই ফের স্পষ্ট হয়েছে নজরদারির অভাব। চম্পাহাটি, নৈহাটি, কল্যাণী, দত্তপুকুরের ঘটনার পরও এখনও যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে ওঠেনি তা স্পষ্ট। মঙ্গলবার এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার ও ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ আকাশ মাগারিয়া। সেখানেও ঢোলাহাটের ঘটনাকে স্পষ্ট নজরদারি ও সচেতনতার অভাবে বলে জানান এডিজি দক্ষিণবঙ্গ। বুধবার এই ঘটনায় বাজি কারখানার অন্যতম মালিক চন্দ্রকান্ত বণিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পলাতক আর এক অভিযুক্ত তুষার বণিক।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement