মাদুরাইয়ে শুরু হচ্ছে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস

IMG-20250401-WA0399(1)

ক্রমশ শক্তি ক্ষয় হচ্ছে।দেশজুড়ে কমছে প্রভাব। ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিয়েও প্রতিটি নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। এমনকি যে সমস্ত রাজ্যে একসময় ভালো সংগঠন ছিল, সেই সমস্ত রাজ্যেও রক্তক্ষরণ জারি রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই আজ বুধবরা থেকে তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে শুরু হচ্ছে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে পার্টি কংগ্রেস। এই পার্টি কংগ্রেসেই সীতারাম ইয়েচুরির উত্তরসূরি বেছে নেবে লাল শিবির। পাশাপাশি পাশাপাশি আগামী দিনে পার্টির রাজনৈতিক রণকৌশল কি হবে, তাও ঠিক হবে এই পার্টি কংগ্রেসে। একইসঙ্গে কোন পথে সংগঠনকে আরও মজবুত করা যায়, সেই পথও সিপিএম খোঁজার চেষ্টা করবে সিপিএম। এবার পার্টি কংগ্রেসের মূল বিষয়বস্তু হল রাজনৈতিক প্রস্তাব। এই প্রসঙ্গে প্রকাশ কারাত জানান, কোন রাজনৈতিক কৌশলগত রণকৌশল নেওয়া হবে তা নিয়ে কংগ্রেসে আলোচনা হবে। কারণ যে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে তার উপর বেশ কিছু সংশোধনী এসেছে। তিনি জানান, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সাংগঠনিক রিপোর্ট। গত তিন বছরের কার্যাবলির ফলাফল নিয়ে আলোচনা হবে কংগ্রেসে। ইন্ডিয়া জোট ও দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া নিয়ে কারাত বলেন, “আমাদের বরাবরের লক্ষ্য ছিল আরএসএস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ লড়াই। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে ইন্ডিয়া জোট গড়ে উঠেছিল ভোটের আগে। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী মোদি সরকারকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে না পারলেও আমরা আংশিক সাফল্য পেয়েছি। কারণ এই জোট গড়ে ওঠায় মোদির বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য যদি নির্বাচনই হয়, তাহলে বলতে পারি সেটা কোনও লক্ষ্যই নয়। তাই সিপিএমকে নিজের শক্তিতে এই হিন্দুত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।” সেইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরায় দলের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করাই কেবলমাত্র সিপিএমের লক্ষ্য নয় বরং আমরা গোটা দেশে কীভাবে এগিয়ে যেতে পারব তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেই সাংগঠনিক প্রক্রিয়াই হবে পার্টি কংগ্রেসে। আমাদের লক্ষ্য, দলের ভিত ও নিজস্ব শক্তিকে ফিরে পাওয়া। প্রকাশ কারাতের বক্তব্য, শুধু ভোটের সময় বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বিরোধিতা করলে চলবে না। বছরভর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সংঘের বিরোধিতায় নামতে হবে পার্টিকে। সংঘের বিরোধিতায় পার্টির অন্দরে গয়ংগচ্ছ মনোভাব রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিএম পলিটব্যুরোর আহ্বায়ক । তাঁর স্বীকারোক্তি, দীর্ঘদিন ধরেই পার্টি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছে। সিপিএমকে এর থেকে মুক্ত হতে হবে বলে জানান তিনি। এদিকে সীতারাম ইয়েচুরি ও কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের মৃত্যুর পরে ১৭ থেকে পলিটব্যুরোর সদস্য সংখ্যা কমে হয়েছে ১৫। এঁদের মধ্যে ৭৫ বছরের বয়সসীমার কারণে ৭ জন সদস্যের এ বার অবসরগ্রহণের কথা। এঁদের মধ্যে আছেন বৃন্দা কারাত এবং সুভাষিণী আলি। এ ছাড়া, পিনারাই বিজয়ন, প্রকাশ কারাট, সূর্যকান্ত মিশ্র, জি রামকৃষ্ণন এবং মানিক সরকারেরও বিদায় নেওয়ার কথা। একসঙ্গে এতজন পলিটব্যুরো সদস্যের অবসর বর্তমান পরিস্থিতিতে উপযুক্ত কি না, তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে আলোচনা চলছে। তাই মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে এই সমস্ত বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেদিকেও তাকিয়ে সিপিএম। তবে সবথেকে বেশি আগ্রহ থাকবে নতুন সাধারণ সম্পাদক বাছাই নিয়ে। ইতিহাস বলছে, সিপিএম এমন ভাবে সাধারণ সম্পাদক বাছাই করে যাতে তিনি একাধিক টার্ম ওই পদে থাকতে পারেন। প্রথম সম্পাদক পি সুন্দরাইয়া থেকে প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি পর্যন্ত এই ধারা বজায় রয়েছে। এই ধারা বজায় রাখা হলে সেলিম অথবা বেবি বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। সব মিলিয়ে আজ থেকে মাদুরাইয়ে শুরু হওয়া পাঁচদিনের এই পার্টি কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement