মার্কিন ফেডারেল কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে অসন্তুষ্ট নয়াদিল্লি।ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ বা ‘র’কে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকার ফেডারেল সরকার গঠিত কমিশন। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কেও মন্তব্য করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। আর সেই রিপোর্ট নিয়েই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। মঙ্গলবার আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন তাদের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ‘র’-এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে মার্কিন কমিশন। শুধু তাই নয়, মোদী জমানায় ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই কমিশনের অভিযোগ, ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চলছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন কমিশনের এহেন বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল শুরু হয়েছে। মার্কিন কমিশনের দাবি, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার চেষ্টায় ‘র’-এর যোগ রয়েছে। সেই কারণেই এই সুপারিশ করেছে তারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।মার্কিন প্রশাসনের অধীনস্থ এই কমিশনটির মূল কাজ হল বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়ের উপর নজর রাখা। সেইমতো আমেরিকার সরকারকে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেয় এই কমিশন। অর্থাৎ, এটি হল মার্কিন প্রশাসনকে পরামর্শ দেওয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। তবে কমিশনের সুপারিশ যে আমেরিকার প্রশাসনকে মানতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই তার নিন্দা করেছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, আমেরিকার ফেডারেল কমিশনের ওই রিপোর্টটি বিদেশ মন্ত্রকের নজরে এসেছে। তিনি বলেন, “ওই রিপোর্টে আবার পক্ষপাতমূলক এবং রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মূল্যায়ন করার ধারা জারি রয়েছে।” আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ভুল ভাবে উপস্থাপিত করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রকৃত উদ্বেগের ক্ষেত্রগুলির পরিবর্তে ভারতের একটি প্রাণবন্ত এবং বহুমুখী সংস্কৃতিতে ভরা সমাজব্যবস্থার উপর সন্দেহ প্রকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্র। মার্কিন কমিশনের ওই রিপোর্টে ইচ্ছাকৃত ভাবে একটি এজেন্ডাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করছে নয়াদিল্লি। মার্কিন কমিশনের রিপোর্টের সমালোচনা করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, “১৪৪ কোটি মানুষের দেশ ভারত। এখানে সব ধর্মের মানুষ রয়েছেন। আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন ভারতের বহুত্ববাদী চিত্র বা সব ধর্মের সহাবস্থানকে স্বীকৃতি দেবে, এমন কোনও আশা আমরা করি না।” কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারত গণতন্ত্র এবং সহনশীলতায় বিশ্বাস রাখে। ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করার এই ধরনের চেষ্টা কখনও সফল হবে না বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। উল্টে, আমেরিকার এই কমিশনকেই একটি ‘উদ্বেগের বিষয়’ বলে চিহ্নিত করা উচিত বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। অবশ্য মার্কিন কমিশনের এই অভিযোগ প্রথমবার নয়, এর আগেও একাধিকবার ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছে এই সংস্থা। যদিও প্রতিবারই বিদেশমন্ত্রকের তরফে অভিযোগ খারিজ করে বলা হয়েছে, এই ধরনের মন্তব্য ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। বলা হয়, ভারত ও ভারতের সাংবিধানিক পরিকাঠামো, তার বহুত্ব ও গণতান্ত্রিক নীতিকে বুঝতে ভুল হচ্ছে এই কমিশনের। অতীতের সেই ধারা অব্যাহত রেখে এবারও একই অভিযোগ তুলল মার্কিন কমিশন। অদ্ভুতভাবে এই রিপোর্টে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে একটি শব্দও খরচ করা হয়নি। যদিও ভারতের পাশাপাশি কমিউনিস্ট দেশ ভিয়েতনামকে উদ্বেগের দেশগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। যদিও মার্কিন কমিশনের এই রিপোর্টের পালটা কূটনৈতিক মহলের দাবি, যে আমেরিকা এই অভিযোগ তুলছে সেই আমেরিকাতেই বর্ণবিদ্বেষের জেরে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার মতো ঘটনা ঘটে। এই আমেরিকার অন্দরেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইহুদি বিদ্বেষ, আফগানিস্তানের মতো জায়গায় তালিবান ইস্যুতে আমেরিকার কর্মকাণ্ড গোটা দেশ প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের মুখে এই ধরনের মন্তব্য মানায় না। উল্লেখ্য, গত ২০২২ সাল থেকে ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে মার্কিন কমিশন। এবার সেই রিপোর্টে বাড়তি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে ভারতের গুপ্তচর সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার দাবি। যদিও এই রিপোর্টকে কোনওবারই বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি হোয়াইট হাউস। অতীতের ট্রাম্প থেকে বাইডেন, কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমলেই কিন্তু কমিশনের সুপারিশকে আমল দেওয়া হয়নি