বিচারপতির বাংলোয় টাকা উদ্ধার, রিপোর্ট তলব

IMG-20250321-WA0287

বিচারপতির বাংলো থেকে মিলল বিপুল পরিমাণ টাকা। আর সেই ঘটনায় শুক্রবার শোরগোল পড়ে যায় রাজধানীতে। দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বাংলোয় হিসাব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ওই টাকার কোনও হিসাব দিতে পারেননি বিচারপতি বা তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। বিচারপতির সরকারি বাংলো থেকেই ওই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ঘটনায় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির রিপোর্ট তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তাঁকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি ভার্মার দিল্লির সরকারি বাংলোয় লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে সেখানকার একটি ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করেন দমকলের কর্মীরা। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতির বাংলো থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় তুমুল শোরগোল পড়ে যায় রাজধানীতে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কলেজিয়াম শুক্রবার সকালেই তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডেকে বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে অবিলম্বে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখান থেকেই দিল্লি হাইকোর্টে বদলি হয়ে এসেছিলেন ওই বিচারপতি। শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চও (প্রধান বিচারপতি-সহ কর্মরত সব বিচারপতি) জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিচারপতি ভার্মাকে কেবল বদলি করলেই হবে না। তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। ওই বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, বিচারপতি ভার্মার বিরুদ্ধে ইন-হাউস তদন্তের প্রথম ধাপ বদলি। পরে আরও পদক্ষেপ করা হবে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যেই বদলির সুপারিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন। সুপারিশের ভিত্তিতে বদলির নির্দেশ আইন মন্ত্রক এখনও জারি করেনি। সূত্রের খবর, বিচারপতি বার্মার বদলি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই জারি হবে। অন্য দিকে, বিচারপতি ভার্মা শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টে যাননি। একটি সূত্র জানিয়েছে, তাঁর আদালতের কর্মীরা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, বিচারপতি ভার্মা ছুটিতে রয়েছেন।২০২১ সালে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে দিল্লি হাই কোর্টে গিয়েছিলেন বিচারপতি বর্মা। বর্তমানে সিনিয়রিটির নিরিখে দিল্লি হাই কোর্টে তিনি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। গত সপ্তাহে দোলের ছুটি চলাকালীন তাঁর বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে হিসাব-বহির্ভূত টাকা উদ্ধার করা হয় বলে অভিযোগ। বিচারপতির সরকারি বাংলোয় আগুন লেগে গিয়েছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যেরাই দমকল ডেকেছিলেন। দমকলের কর্মীরা বাড়িতে ‘টাকার পাহাড়’ দেখতে পান। ওই সময়ে বিচারপতি বর্মা শহরে ছিলেন না। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে কলেজিয়াম আলোচনায় বসে। তারাই বিচারপতির বদলির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সূত্রের খবর, কলেজিয়ামের অনেকেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাঁরা চান, বিচারপতি বর্মা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। তা না-হলে তাঁকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। শুক্রবার সকাল থেকে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও হাই কোর্টের বিচারপতির কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের অভিযোগ থাকলে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাই কোর্টের রিপোর্ট দেখার পর আগে অভিযুক্তের কাছ থেকে জবাব চাইবেন। জবাবে তিনি সন্তুষ্ট না-হলে ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের এক জন এবং যে কোনও দুই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকবেন। তাঁদের রিপোর্ট দেখে দেশের প্রধান বিচারপতির যদি মনে হয় শাস্তি দেওয়া উচিত, তা হলে তিনি ওই বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলবেন। এর পরেও বিচারপতি যদি পদত্যাগে রাজি না-হন, তবে সংসদের মাধ্যমে তাঁর অপসারণের জন্য প্রধান বিচারপতি সরকারকে চিঠি লিখতে পারেন। ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) ধারা অনুযায়ী, সংসদের মাধ্যমে হাই কোর্টের বিচারপতিকে অপসারণ করা যায়।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement