ভোররাতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে হয়ে গেল দিনহাটা চওড়াহাট বাজারের ১৮ টি দোকান। শনিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, আলু পেঁয়াজের পাইকারি দোকান সহ সুপুরির দোকান সহ আরো বেশ কয়েকটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয়। একটানা কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি খবর পেয়ে ভোরেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ , দিনহাটা পৌরসভার চেয়ারম্যান অপর্ণা দে নন্দী, পৌরসভার কাউন্সিলর রমেন বর্মণ, দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী, ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম সদস্য নারায়ণ সাহা, সমাজকর্মী সায়ন্তন গুহ সহ অন্যান্যরা। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে জানান, ভোররাতে জানতে পারি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার পরিচিত আছে। ব্যবসায়ীদের গোপাল চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, আমার সুপারির দোকান রয়েছে। ভোর চারটা নাগাদ জানতে পারলাম বাজারে আগুন লেগেছে। আমার দোকানের ভিতরে থাকা তিন লক্ষ টাকার উপরে জিনিসপত্র সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জীবনকৃষ্ণ সাহা, শংকর সাহা, সুশান্ত সাহা প্রমুখও জানান, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার রাতেও দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাই। ভোররাতে শুনতে পারি বাজারে আগুন লেগেছে। তড়িঘড়ি করে ছুটে এসে দেখি দোকানের সবকিছু পুড়ে গিয়েছে। বুঝে উঠতে পারছিনা কি করব।প্রত্যক্ষদর্শীদের বাবাই সাহা, মিন্টু দেবনাথ জানিয়েছেন, আমরা বাবুরহাটে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছি। এদিন ভোরে বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই একটা শব্দ শুনে। তারপরেই দেখি বাজারে দোকানের ভেতরে আগুন জ্বলছে। সেই সময় হাওয়া চলছিল। অল্পের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়তেই দমকলকে খবর দিলে দমকল কর্মীরা ছুটে আসে।এদিকে মনে করা হচ্ছে শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটেছে বলে ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই এমনটা মনে করলেও আসলে কি থেকে এই আগুন লাগলো তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে দমকলের এক আধিকারিক জানান, খবর পাওয়া মাত্রই দমকলের পাচটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এদিকে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বাজারের অব্যবস্থা নিয়ে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। রানা গোস্বামী বলেন, চওড়াহাট বাজার নিয়ে বারংবার রেগুলেটেড মার্কেট কমিটিকে বাজার সংস্কারের বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে অবগত করা হলেও কোনরকম কাজ হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জানান আগামীতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এবিষয়ে তিনি দারস্ত হব। তবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ যে ১৮ দোকান পুড়ে গেল বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেল গোটা এলাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকার উপরে হবে। দিনহাটা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি সকলের কাছে ভাড়া নেবে কোনরকম কাজ করবে না। এটা নিয়ে আমরা অনেকবার অভিযোগ জানিয়েছি। কোনরকম উন্নয়ন হচ্ছে না। যে যার মত যেমন খুশি ঘর তৈরি করে নিচ্ছে তার কোন নীতি নেই। জেলাশাসককে অনেকবার বলেছি তিনিও নজর দিতে পারেন না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকেও আমরা বলেছি। দিনহাটার এই বাজারে শুধু এবারই নয় একাধিকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, বারবার এই বাজারে আগুন লাগে। এদিনও বাজারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। খানিকটা সচেতনতারও অভাব আছে। একেকটা দোকানের গায়ে আরেকটি দোকান। মাঝে কোন জায়গা নেই। দাহ্য পদার্থ বিশেষ করে পলিথিনকে ব্যবহার করা হয়। সে ক্ষেত্রে আগুন লাগলে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এদিনও সেটাই দেখা গেল। ১৮ একটি দোকান ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সব রকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে। দমকল কর্মীরা সময় মত এসেছে এবং তৎপরতার সাথে কাজ করেছে।