পণবন্দিদের উদ্ধারে পাক সেনা, হুমকি বিদ্রোহীদের

IMG-20250312-WA0311

বালুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস দখল করে পাকিস্তানের প্রশাসনের কাছে একগুচ্ছ দাবিদাওয়া রেখেছে বিদ্রোহীরা।৪৮ ঘণ্টার চরমসীমা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তান সরকারকে। দাবি না মানলে পণবন্দিদের হত্যা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেবালুচিস্তানের বিদ্রোহীরা। তবে পণবন্দিদের উদ্ধার করতে ময়দানে নামানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে।তবে তাদের মোকাবিলায় যাবতীয় প্রয়াস জারি রেখেছে বিদ্রোহীরা। শুধু তাই নয়, ১৬ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করা হয়েছে বলে সেনার যে দাবি করেছিল তা খারিজ করেছে বালোচ বিদ্রোহীরা। স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, তাঁদের কোনও সদস্যের মৃত্যু হয়নি। মিথ্যা দাবি করেছে পাক সেনা। এখনও জাফর এক্সপ্রেসে শতাধিক পণবন্দিরা আটকে রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে পদে পদে বাধা পাচ্ছেন নিরাপত্তাবাহিনীর আধিকারিকেরা। কারণ, বিদ্রোহীরা পণবন্দিদের ঘিরে রয়েছেন। তাঁদের পরনে বিস্ফোরক ভর্তি জ্যাকেট। আত্মঘাতী সেই পোশাক পরেই তাঁরা পাক নিরাপত্তাবাহিনীর মোকাবিলা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নিরপরাধ যাত্রীদের ‘মানবঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ জন পণবন্দিকে মেরেও ফেলা হয়েছে বলে দাবি বিদ্রোহীদের।নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে খবর, পণবন্দি যাত্রীদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুরাও রয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদেরই ‘মানবঢাল’ করছেন বিদ্রোহীরা। ফলে তাঁদের সরাসরি আক্রমণ করা যাচ্ছে না। যাত্রীদের সুরক্ষাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের অভিযান জটিল হয়ে পড়েছে। এগোতে হচ্ছে অতি সন্তর্পণে। বুধবার সকাল থেকে চলছে গুলির লড়াই।বালুচিস্তানের বিদ্রোহীরা জানিয়েছেন, ১০ জন পণবন্দিকে হত্যা করা হয়েছে। এখনও তাঁদের দখলে মহিলা ও শিশু-সহ ২১৪ জন। পাক নিরাপত্তাবাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। পাকিস্তানের সরকারের তরফে এই আক্রমণকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ জানিয়েছেন, বালুচিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীকে সাহায্য করতে হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার বালুচিস্তানের কাচ্চি জেলার বোলান এতাকায় একটি সুড়ঙ্গে ঢোকার মুখে যখন জাফর এক্সপ্রেসটিকে অপহরণ করা হয়, তখন ওই ট্রেনে ছিলেন অন্তত ৪৫০ জন। বুধবার পর্যন্ত ১৫০ জন যাত্রীকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ বিদ্রোহী। এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। যাত্রীদের পণবন্দি করে তারা পাকিস্তানের জেল থেকে বন্দি বিনিময়ের দাবি জানিয়েছে। বিএলএ-র অনেক সদস্যকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করে জেলবন্দি করা হয়েছে। তাঁদের ফেরত চায় সংগঠনটি। সেই উদ্দেশ্যেই ট্রেন অপহরণ। পাক সরকার বিএলএ-র দাবির বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। এই ধরনের দাবি অতীতে একাধিক বার পাক সরকার নাকচ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার বালোচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী জাফার এক্সপ্রেস। পাক সেনাকর্মী থেকে শুরু করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেই ছিলেন ওই ট্রেনে। যাত্রার মাঝপথে আচমকাই চলন্ত ট্রেনে হামলা চালায় বালোচ বিদ্রোহীরা। রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে পণবন্দি করা হয় ২১৪ জনকে। বালোচ বিদ্রোহীদের দাবি, এই অভিযানে ৩০ জনের বেশি পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে পাক সেনার সঙ্গে লড়াই চালানোর পর পাক সেনা পিছু হটেছে।বালোচ বিদ্রোহীদের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, “ট্রেন এখন আমাদের দখলে। বর্তমানে ২১৪ জন পণবন্দি রয়েছেন। পাক সরকার যে বালোচ বিদ্রোহীদের বন্দি করেছেন তাঁদের মুক্তির বদলে আমরা বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি আছি।” এই বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার চরমসীমা দেওয়া হয়েছে পাক সরকারকে। বলা হয়েছে, “যে বালোচ রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করা হয়েছে এবং হুম করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের সকলকে মুক্তি দিতে হবে। যদি আমাদের দাবি না মেনে ফের সেনা অভিযান চালানো হয়, সেক্ষেত্রে সব বন্দিদের শেষ করে দেব ও এই ট্রেন পুরোপুরি ধ্বংস করে দেব।”গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্রোহীরা বালুচিস্তানে গেরিলা কৌশলের উপর নির্ভর করে নানা সময়ে নানা ‘বিদ্রোহে’র ঘটনা ঘটান। ২০১৮ সাল থেকে বিদ্রোহীদের হামলার কৌশলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। অনেক বেশি পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছেন তাঁরা। বেশির ভাগ সময়ই আত্মঘাতী হামলাকে বেছে নিচ্ছেন।শুধু ট্রেন নয়, বিদ্রোহীদের নিশানায় থাকে যাত্রিবাহী বাসও। তাঁদের কৌশল পরিবর্তনের পর প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের অগস্টে। চিনা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে যাওয়া এক বাসে আত্মঘাতী হামলা চালান বিদ্রোহীরা। ২০১৮ সালের পর থেকে গোয়েদর, করাচি, তুরবাত, বোলানের মতো এলাকায় ১০টিরও বেশি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছেন তাঁরা।
পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। কিন্তু ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বালোচ নাগরিকদের। ‘চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) তৈরির পর থেকেই বিদ্রোহীরা জ্বলে উঠেছেন। এই করিডরের প্রতিবাদে বার বার তাঁরা বিদ্রোহ দেখিয়েছেন। গত অক্টোবরে মাজ়িদ ব্রিগেড (২০১০ সালে কোয়েটায় পাক সেনার হাতে নিহত বিএলএ কমান্ডরের নামে তৈরি গোষ্ঠী) করাচি বিমানবন্দরের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালায়। চিন থেকে আগত ইঞ্জিনিয়ার এবং বিনিয়োগকারীদের একটি কনভয়কে তারা লক্ষ্যবস্তু বানায়। বিস্ফোরকবোঝাই একটি গাড়ি ঢুকে পড়ে ওই কনভয়ে। সেই বিস্ফোরণে চিনা নাগরিক এবং তাঁদের নিরাপত্তাকর্মী-সহ কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হন।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement