যাদবপুরকাণ্ডে তোলপাড় রাজ্য, ছাত্র ধর্মঘটে অশান্তি

IMG-20250303-WA0240

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝেই যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এস এফ আই।সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি ছড়ায়।কোথাও চলল কিল-চড়-ঘুষি। কোথাও আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশই তুলে নিয়ে গেল বিক্ষোভকারীদের। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আবহে যাদবপুরকাণ্ড ঘিরে ছাত্র ধর্মঘটের ডাকে সোমবার সকাল থেকেই তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্যের নানা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ছাত্র ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর কলেজে বেঁধে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এসএফআই এবং টিএমসিপির কর্মীরা। ধর্মঘটের সমর্থনে এসএফআইয়ের সদস্যরা কলেজের ১ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান করছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নেতৃত্বে বহিরাগতরা জোর করে ঢোকার চেষ্টা করে। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। কয়েকজন জখমও হন। টিএমসিপির সদস্যরা কয়েকজন এসএফআই সদস্যকে টেনে-হিঁচড়ে গেট থেকে তুলে দেন। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করেনি বলেও অভিযোগ সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ বারবার ক্যাম্পাসে ঢুকছে বলে অভিযোগ এসএফআইয়ের। শুধু মেদিনীপুর কলেজেই নয়, সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়েও উত্তেজনা ছড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে ডিএসও’র কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। টেনে-হিঁচড়ে ডিএসও সদস্যদের তোলা হয় পুলিশ ভ্যানে। ডিএসও’র মহিলা সদস্যাদের চ্যাংদোলা করে পুলিশ ভ্যানে তুলতে দেখা যায়। পাঁশকুড়ার বনমালী কলেজে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। আহত ডি এস ও, এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক বেশ কয়েকজন পড়ুয়া। ঘটনা একে অপরের দিকে অভিযোগ তুলেছে দু’পক্ষ। সোমবার সকাল থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং ডিএসও। পঠনপাঠন বন্ধ ছিল কলা বিভাগে। কিন্তু হাতাহাতি বা ধস্তাধস্তির মতো গন্ডগোল সেই অর্থে হয়নি। সোমবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষাও হয়েছে। তবে এদিন উত্তেজনা ছড়ায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সোমবার সকাল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন ধর্মঘটীরা। এরপর এক ছাত্র যখন ক্যাম্পাসে ঢুকতে যান, তখন তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুরু হয়ে যায় বচসা। এমনকি সেখানে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। শেষপর্যন্ত অবশ্য ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেননি ওই ছাত্র। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় কলেজ স্ট্রিটে। ছাত্র ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় উত্তরবঙ্গেও। শিলিগুড়িতে বাঘাযতীন পার্ক এলাকায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস আটকে দেন ধর্মঘটের সমর্থকরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা। স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। শেষপর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় কোচবিহারেও। শহরের জেনকিন্স স্কুল মোড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও এআইডিএসও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে গন্ডগোল বাধে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। আটক করা হয় এআইডিএসও ছাত্র সংগঠনের ২ জনকে। শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা ছিল। অভিযোগ, ওইদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অশান্তি তৈরির চেষ্টা শুরু করে বাম ছাত্ররা। ছাত্র সংসদ নির্বাচন-সহ একাধিক দাবিতে সুর চড়াতে থাকে তারা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছনোর আগে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে একদল বাম ছাত্র। ওঠে স্লোগান। পালটা তাতে বাধা দেয় টিএমসিপি। দু’পক্ষের হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তারই মাঝে শুরু হয় ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভা। আচমকা সভাস্থলে পৌঁছে যায় বিক্ষোভকারীরা। তুমুল উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকা তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিসেও ব্যাপক ভাঙচুর শুরু হয়। আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ব্রাত্য বসুর গাড়ির চাকার হাওয়াও খুলে দেওয়া হয়। ধাক্কাধাক্কিতে চোট পান খোদ শিক্ষামন্ত্রী। এদিকে মন্ত্রীর গাড়ির চাকায় পিষে এক ছাত্র আহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনা নিয়েই গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে সোমাবর রাজ্য জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এসএফআই। আর সেই ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় জেলায় জেলায়।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement