নয়াদিল্লি: ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মিশনের মাধ্যমে ৭ গিগাওয়াট পরিচ্ছন্ন শক্তি যুক্ত হয়েছে এবং প্রায় ২৪ লক্ষ পরিবার সৌরশক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পারফর্ম, অ্যাচিভ অ্যান্ড ট্রেড (পারফর্ম, অ্যাচিভ অ্যান্ড ট্রেড ) ব্যবস্থা থেকে কার্বন ক্রেডিট ট্রেডিং স্কিম (সিসিটিএস)-এ রূপান্তর শিল্পক্ষেত্রে শক্তি নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করেছে, যেখানে কার্বন-ঘনত্ব হ্রাস এবং লেনদেনযোগ্য ঝণব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় স্থানে আনা হয়েছে।ডিজিটাল মাধ্যম শক্তি দক্ষতা সংক্রান্ত শাসনব্যবস্থাকে আধুনিক করে তুলছে, নজরদারি, সম্মতি এবং স্বচ্ছতা আরও মজবুত হচ্ছে। ভারতের পরিচ্ছন্ন শক্তি সক্ষমতা এখন মোট স্থাপিত ক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি অ-জীবাশ্ম উৎস থেকে আসছে, যা নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ, দক্ষতা প্রকল্প এবং গ্রিড স্থিতিশীলতার সাফল্যকে প্রতিফলিত করে।শক্তি শুধু বিদ্যুৎ বা জ্বালানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি আধুনিক জীবনের চালিকাশক্তি। শক্তি আমাদের ঘর আলোকিত করে, শিল্পকে সচল রাখে, পরিবহণ ব্যবস্থাকে গতিশীল করে, ডিজিটাল পরিষেবা চালায় এবং হাসপাতাল, স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ভিত্তি হল শক্তি। ভারতের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী শক্তির চাহিদাও ক্রমাগত বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণে শুধু সরবরাহ বৃদ্ধি নয়, শক্তির দক্ষ ও দায়িত্বশীল ব্যবহারও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শক্তি দক্ষতার অর্থ হল কম শক্তি ব্যবহার করে একই মাত্রার উৎপাদন অর্জন করা, আর শক্তি সংরক্ষণ মানে অপচয় এড়ানো। এই দুই বিষয় মিলেই ভারতের শক্তি কৌশলের একটি মূল স্তম্ভ গঠন করে। এই গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে, শক্তির দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং এই ক্ষেত্রে অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর ভারতে জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবস পালন করা হয়।ভারতের বর্তমান শক্তি পরিস্থিতি-ভারত বিশ্বের শীর্ষ তিনটি শক্তি-ভোক্তা দেশের অন্যতম, এবং প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩–২৪ সালে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১,৭৩৯.০৯ বিলিয়ন ইউনিট, যা ২০২৪–২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৮২৯.৬৯ বিলিয়ন ইউনিট—৫.২১ শতাংশ বৃদ্ধি। ২০২৫–২৬ সালের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২,০০০.৪ বিলিয়ন ইউনিট।একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে শক্তি ঘাটতির পরিমাণ মাত্র ০.১ শতাংশ হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে। মোট ২৪১ গিগাওয়াটের সর্বোচ্চ চাহিদা পূরণে কোনো ঘাটতি না থাকা উন্নত ব্যবস্থাগত স্থিতিস্থাপকতা এবং চাহিদা-সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নতিকে স্পষ্ট করে।শক্তি সংরক্ষণে প্রধান উদ্যোগসমূহ-শক্তির অপচয় কমাতে এবং সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রক ও শক্তি সংক্রান্ত সক্ষমতা ব্যুরো শিল্পক্ষেত্রজুড়ে একাধিক জাতীয় কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচিগুলি দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণ, উন্নত নকশা এবং স্মার্ট শক্তি ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করছে। এই অগ্রগতিকে রূপ দিচ্ছে যে প্রধান কেন্দ্রীয় সরকারি উদ্যোগগুলি, সেগুলি হল-শিল্পক্ষেত্রে শক্তি দক্ষতা-ভারতের মোট শক্তি ব্যবহারের একটি বড় অংশ শিল্পক্ষেত্রের, ফলে ব্যয় ও নির্গমন কমাতে দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্বন ক্রেডিট ট্রেডিং স্কিম (সিসিটিএস) হল শিল্পক্ষেত্রে ডিকার্বনাইজেশনের জন্য ভারতের নতুন বাজার-ভিত্তিক কাঠামো। এই ব্যবস্থায় উচ্চ নির্গমনকারী শিল্পক্ষেত্রগুলির জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন তীব্রতার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। যারা এই লক্ষ্যের চেয়ে ভাল ফল করে, তারা কার্বন ক্রেডিট শংসাপত্র অর্জন করে, যা বাজারে লেনদেনযোগ্য। ডিসেম্বর ২০২৫-এ সরকার অ্যালুমিনিয়াম, সিমেন্ট, পেট্রোরসায়ন, শোধনাগার, পাল্প ও কাগজ, বস্ত্র এবং ক্লোর-অ্যালকালি-সহ একাধিক শক্তি-নিবিড় শিল্পক্ষেত্রকে পূর্ববর্তী পারফর্ম, অ্যাচিভ অ্যান্ড ট্রেড ব্যবস্থার পরিবর্তে সিসিটিএস সম্মতি ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসে। পারফর্ম, অ্যাচিভ অ্যান্ড ট্রেড প্রকল্প হল শিল্পক্ষেত্রে শক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে ভারতের ভিত্তিমূলক কর্মসূচি। এই ব্যবস্থায় নির্ধারিত ভোক্তাদের জন্য শক্তি হ্রাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতো এবং যারা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করত তারা শক্তি সঞ্চয় শংসাপত্র অর্জন করত। পারফর্ম, অ্যাচিভ অ্যান্ড ট্রেড বৃহৎ পরিসরে দক্ষতা বৃদ্ধির ভিত গড়ে তোলে, আর সিসিটিএস সেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে সরাসরি কার্বন নির্গমন হ্রাসের সঙ্গে কর্মদক্ষতাকে যুক্ত করেছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব-রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কাঠামো বিষয়ক কনভেনশনের অধীনে প্রতিটি দেশকে নিজস্ব অগ্রাধিকার অনুযায়ী শক্তি রূপান্তরের পথ নির্ধারণ করতে হয়। ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু সংক্রান্ত দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রেখে সেই পথ নির্ধারণ করেছে। ২০৩০ সালের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের মধ্যে রয়েছে জিডিপির নির্গমন তীব্রতা ৪৫ শতাংশ হ্রাস, মোট স্থাপিত বিদ্যুৎ ক্ষমতার ৫০ শতাংশ অ-জীবাশ্ম উৎস থেকে নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত ২.৫–৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড সমতুল্য কার্বন সিঙ্ক সৃষ্টি, লাইফ আন্দোলনের মাধ্যমে সুস্থায়ী জীবনধারা প্রচার এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি।ভারত আন্তর্জাতিক সৌর জোটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যার লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সাশ্রয়ী সৌরশক্তির বিস্তার। এ ছাড়াও দুর্যোগ-সহনশীল পরিকাঠামো জোট, মিশন ইনোভেশন এবং আন্তর্জাতিক নবিকরণযোগ্য শক্তি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ভারত বিশ্বব্যাপী পরিচ্ছন্ন শক্তি উদ্ভাবনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আগামী পথচলা: জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান, লক্ষ্য এবং বিকশিত ভারতের পথে যাত্রাশক্তি সংরক্ষণ ভবিষ্যতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে থাকবে এবং এই যাত্রায় শক্তি সংক্রান্ত সক্ষমতা ব্যুরো একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। মান ও লেবেলিং, ভবন শক্তি কোড, জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ পুরস্কার ও সচেতনতা উদ্যোগ, শক্তি নিরীক্ষা, রাজ্য অংশীদারিত্ব এবং বৃহদাকারৃর জনসচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে শক্তি দক্ষতাকে দৈনন্দিন সিদ্ধান্তের স্বাভাবিক অংশ করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। বিদ্যালয়ের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে গণসচেতনতা অভিযান ও জাতীয় পুরস্কার – এই সব কর্মসূচি তরুণ, পরিবার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বোঝাতে সাহায্য করে যে সঞ্চিত প্রতিটি শক্তি এককই জাতীয় অগ্রগতিতে অবদান রাখে।জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে বার্তা স্পষ্ট – শক্তি সংরক্ষণ কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রয়োজন নয়, এটি একটি নাগরিক দায়িত্ব। সরকার, শক্তি দক্ষতা ব্যুরো, শিল্পক্ষেত্র এবং নাগরিকদের একসঙ্গে কাজ করে একটি সচেতন, দক্ষতা-নির্ভর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যা ভারতের পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সুস্থায়ী শক্তি ভবিষ্যতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করবে। ২০৩০ সালের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি এবং দীর্ঘমেয়াদে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে এগিয়ে চলার পথে শক্তি সংরক্ষণ ভারতের প্রবৃদ্ধি কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই থাকবে।










