দাঁত ফোটানো যাবে না চিকেনস নেকে, বাংলাদেশ সীমান্তে বড় পদক্ষেপ নিল ভারতীয় সেনা

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে স্পর্শকাতর ‘চিকেনস নেক’ বা ‘শিলিগুড়ি করিডর’ রক্ষায় বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে ভারত। এই সীমান্ত বরাবর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি জায়গায় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে। সামরিক পরিভাষায় এগুলিকে ‘গ্যারিসন’ বলা হয়। আপাতত ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অসমের ধুবুড়ির কাছে বামুনি, বিহারের কিশনগঞ্জ ও পশ্চিবঙ্গের চোপড়ায় ঘাঁটিগুলি বানানো হয়েছে। এক একটি ঘাঁটিতে ৮০০ থেকে ৯০০ জন জওয়ান থাকবে। এগুলি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন হিসাবে কাজ করবে। গোয়েন্দাসূত্রে জানা গেছে, ২২ কিলোমিটার চওড়া এই চিকেনস নেকভারতের নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা।

এই এলাকা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি সরু ভূখণ্ড, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত করেছে। এটি শিলিগুড়ি শহরের পাশ দিয়ে গিয়েছে বলেই এর নাম ‘শিলিগুড়ি করিডর’। এই ভূখণ্ড কেবল ভৌগলিকভাবে নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভৌগোলিকভাবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার লম্বা ও ২২ কিলোমিটার চওড়া এই ‘করিডর’ একদিকে ভারতকে বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে সীমান্ত ভাগাভাগি করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে এটি চিন ও ভুটানের সঙ্গেও ভৌগলিকভাবে কাছাকাছি। এই সরু গঠনের কারণেই একে ‘চিকেন নেক’  বলা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল শাহির শামশাদ মির্জার মধ্যে সংযোগ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে একাধিক চুক্তিও হয়েছে। তাতে পাকিস্তানের সামরিক অস্ত্র ভান্ডার বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে দিতে সন্মত হয়েছে পাকিস্তান। যাতে ভারতের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, চিকেনস নেকের দিকে নজর রয়েছে চিনেরও। সিকিমের নাথুলায় চিন সীমান্ত থেকে এর অবস্থান খুব একটা দূরে নয়। কোনও ভাবে এই করিডর অবরুদ্ধ হলে গোটা উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

ভারতীয় সেনার দিক থেকেও এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেনা সরবরাহ ও মোতায়েনের জন্য এই রাস্তাই ভরসা। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই এর বিকল্প পথ তৈরির উপর কাজ শুরু করেছে। তবে সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন আধিকারিকরা জোর দিয়ে বলছেন এই অঞ্চলটি ভারতের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা করিডর।’ সেনাবাহিনীর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘শিলিগুড়ি করিডর বহু-স্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে রয়েছে। নতুন ঘাঁটিগুলি সেনার দ্রুত গতিশীলতা, সরবরাহ এবং রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে উন্নত করবে।’

শিলিগুড়ির কাছে সুকনায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর ত্রিশক্ত কোর চিকেনস নেকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তত্ত্বাবধান করে থাকে। এমনিতে হাসিমারা বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন রাফাল যুদ্ধ বিমান, মিগ  ও একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্টের মাধ্যমে করিডরের আকাশ সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও এই অঞ্চলে ভারত উন্নত ত্রিমাত্রিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। রাশিয়া থেকে পাওয়া এস-৪০০ ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, ডিআরডিও এবং ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি এমআরএসএএম সিস্টেম এবং স্বদেশী আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও কার্যকর রয়েছে। একসঙ্গে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বে যেকোনও রকম ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান ও প্রতিআক্রমণ সম্ভব। এই অঞ্চলে S-400 আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা কিনা সুদর্শন চক্র নানে পরিচিত ভারতীয় আকাশসীমায় চিনা বা শত্রু বিমানের অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য তৈরি রয়েছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement