শিলিগুড়ি: জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে মণিপাল হসপিটাল, রাঙ্গাপানি এক বিশেষ জনসচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করা। অনুষ্ঠানে অনকোলজি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা পর্বের আয়োজন করা হয়, যেখানে সাধারণ মানুষ ক্যান্সার সম্পর্কে নানা প্রশ্নের উত্তর পান। এর মাধ্যমে রোগ নিয়ে প্রচলিত ভয় ও ভুল ধারণা দূর করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব বোঝানোই ছিল এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।ভারতে ক্যান্সার এখনও অন্যতম বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগটি দেরিতে শনাক্ত হয়, যার ফলে চিকিৎসা জটিল হয়ে ওঠে। মণিপাল হসপিটাল রাঙ্গাপানির এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষকে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং সময়মতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই প্রসঙ্গে মণিপাল হসপিটাল, রাঙ্গাপানির সার্জিকাল অনকোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডাঃ অনির্বাণ নাগ বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। কিন্তু অনেক সময় ভয় বা ভুল ধারণার কারণে মানুষ শরীরের ছোট পরিবর্তনগুলোকেও গুরুত্ব দেন না। আমরা চাই সমাজ বুঝুক, নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং সচেতন জীবনযাপনই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সচেতনতা মানে শুধু চিকিৎসা নয়, এটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, যা রোগী ও তাঁর পরিবারকে চিকিৎসার পথে সাহস জোগায়।রেডিয়েশন অনকোলজির কনসালট্যান্ট ডা. সৌরভ গুহ আধুনিক চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে বলেন,“বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক বেশি নিখুঁত, নিরাপদ ও ফলপ্রসূ হয়েছে। আধুনিক রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে আমরা টিউমারকে নির্ভুলভাবে লক্ষ্য করতে পারি, সুস্থ টিস্যুকে ক্ষতি না করেই। এখন চিকিৎসার লক্ষ্য শুধু রোগ সারানো নয়, বরং রোগীর জীবনের মান বজায় রাখা। সচেতনতা দিবসের মতো কর্মসূচি মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে যে ক্যান্সার মানেই জীবনের শেষ নয়, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে জীবন সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।মেডিক্যাল অনকোলজির কনসালট্যান্ট ডাঃ চিন্নু জোমি রোগীদের মানসিক দিক নিয়ে বলেন, “অনেক পরিবারের কাছে ক্যান্সার মানেই অজানার ভয়। কিন্তু প্রাথমিক শনাক্তকরণ ও নিয়মিত ফলো-আপ রোগীর চিকিৎসাকে অনেক বেশি কার্যকর করে তোলে। চিকিৎসার পাশাপাশি সহানুভূতি, মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিংও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। কেউ যেন একা না লড়ে এই আত্মবিশ্বাস তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য, আর সচেতনতা সেই যাত্রার প্রথম ধাপ।অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ৯০ বছর বয়সী ক্যান্সারজয়ী মিসেস মতি তামাং, যিনি নিজের সংগ্রাম ও জয়ের গল্প শেয়ার করে উপস্থিত সকলের মনে আশা ও অনুপ্রেরণা জাগান। তাঁর কন্যা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমার মা যখন ৯০ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু মণিপাল হসপিটালের চিকিৎসকদের দক্ষতা ও যত্নে আজ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আনন্দে আছেন। উত্তরবঙ্গ, সিকিম ও নেপাল থেকেও বহু মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, কারণ এখানকার পরিষেবার মান সত্যিই প্রশংসনীয়। ডাঃ গুহা ও তাঁর দলের প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ — তাঁরা আমার মাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।মণিপাল হসপিটাল রাঙ্গাপানি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সঠিক তথ্যপ্রচার, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মানসিক সহায়তাই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিবর্তন আনতে পারে। এই উদ্যোগ হসপিটালের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে — উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি জনসচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে একটি সুস্থ ও সচেতন সমাজ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।










