কলকাতা: বিশ্বাসের মহান উৎসব ছট পূজা কলকাতায় মহা জাঁকজমকের সাথে আয়োজিত হচ্ছে। ছট পূজার জাঁকজমক আবারও ঘাটগুলিতে ফিরে এসেছে। কলকাতা পৌর কর্পোরেশন (কেএমসি) এবং কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) শহর এবং এর আশেপাশের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক ঘাটগুলির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে। রবিবারের মধ্যে এই ঘাটগুলি সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত করা হবে। বাবু ঘাট, চেন ঘাট, দাই ঘাট, আহিরিটোলা ঘাট, বাগ বাজার ঘাট, ছোটেলাল ঘাট, কাশীপুর ঘাট সহ অনেক ঘাটে বিশেষ আকর্ষণ দেখা যাবে। প্রতি বছরের মতো, হাজার হাজার ভক্ত অস্তগামী এবং উদীয়মান সূর্যের কাছে প্রার্থনা করতে এই ঘাটগুলিতে পৌঁছাবেন। প্রশাসন নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং আলোর কঠোর ব্যবস্থা করেছে যাতে এই উৎসব শান্তি ও ভক্তির পরিবেশে সম্পন্ন করা যায়। কলকাতা এবং আশেপাশের এলাকার প্রতিটি ঘাটের নিজস্ব বিশেষত্ব এবং নিজস্ব ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।
মহানগরীর প্রধান ঘাট এবং বৈশিষ্ট্য:
বাবু ঘাট: প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত ছট পূজার জন্য বাবু ঘাটে যান। বাবু ঘাট একটি ধর্মীয় স্থানের পাশাপাশি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত, যেখানে মানুষ গঙ্গা আরতি এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে আসে। বাবু ঘাট হল কলকাতার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক নগর জীবনের সঙ্গমস্থল। গঙ্গার তীরে অবস্থিত কলকাতা হল সেই পরিচয় যেখানে ভক্তি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি একসাথে প্রবাহিত হয়।
দাই ঘাট: এই ঘাট ভক্তদের জন্য প্রধান ঘাট। প্রতি বছর এখানে প্রচুর সংখ্যক মানুষ ছটের জন্য সমবেত হন। এই স্থানটি পূজা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত। দক্ষিণ কলকাতা, বন্দর এলাকা থেকেও প্রচুর সংখ্যক তীর্থযাত্রী ঘাটে আসেন।
চেন ঘাট: দক্ষিণ কলকাতা থেকে প্রায় ১০-১৫ হাজার ভক্ত ছট পূজার জন্য এখানে আসেন। সময়ের সাথে সাথে এই ঘাটে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘাটটি পরিবার এবং দলবদ্ধভাবে ভিড় করার জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। সারা বছর এখানে ভিড় থাকে। বিশেষ বিষয় হল মধ্য কলকাতা এবং দক্ষিণ কলকাতা থেকে বেশিরভাগ ছট ভক্তরাও এই ঘাটে পৌঁছান। এখান থেকে নদী এবং সেতুর দৃশ্য খুবই আকর্ষণীয়। বন্দর এলাকা থেকেও প্রচুর সংখ্যক তীর্থযাত্রী চেন ঘাটে আসেন।
ছোটেলাল ঘাট: এই ঘাটটি কলকাতার তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি প্রধান স্থান। এখানে কেবল ছট পূজার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানই অনুষ্ঠিত হয় না, বরং এই ঘাটটি সম্প্রদায়ের ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির প্রতীকও।
কাশীপুর ঘাট: বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের মানুষের কাছে, এই ঘাটটি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথে সংযোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তারা প্রতি বছর ছট পূজায় পরিবার নিয়ে আসেন। ভিড় ১০,০০০ ছাড়িয়ে যায়।
ভিড়ের পরিসংখ্যান:
বাজেকদমতলা ঘাট: ১৫ থেকে ২০ হাজার
আহিরিটোলা ঘাট: ৮ থেকে ১০ হাজার
বাগবাজার ঘাট: ৮ থেকে ১০ হাজার
কাশীপুরঘাট: ১২ থেকে ১৫ হাজার
দাইঘাট: ১২ থেকে ১৫ হাজার
চেইন ঘাট: ১৫ হাজার পর্যন্ত
(ছোটখাটো পার্থক্য সম্ভব)
শুক্রবার কলকাতার ঘাটগুলি পরিদর্শন করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম:
কলকাতা পৌর কর্পোরেশন এবং কেএমডিএ তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা এবং সুবিধার্থে ব্যাপক ব্যবস্থা করেছে।
ঘাটগুলিতে সিঁড়ি পরিষ্কার, আলো, মহিলাদের টয়লেট, জৈব-শৌচাগার এবং স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
প্রতিটি ঘাটে একটি মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হবে।
ভক্তদের প্রতি বিশেষ আবেদন:
এ বছরও কলকাতার প্রধান ছট ঘাটগুলিতে ভক্তদের বিপুল ভিড়ের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রশাসন ভক্তদের নিরাপত্তা ও সুবিধার্থে ব্যাপক ব্যবস্থা করেছে। ভক্তদের প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে যাতে ছট উৎসব শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদে সম্পন্ন করা যায়।









