এসআইআর নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকে নির্বাচন কমিশন

election-commission

বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) সময়েই নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, গোটা দেশেই সেই প্রক্রিয়া চালানো হবে। বিহারে এসআইআর শেষ হতেই বাকি রাজ্যে সেই প্রক্রিয়া চালানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিল কমিশন। বুধবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই বৈঠকে এসআইআর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। মঙ্গলবার সকালে কমিশন থেকে সরাসরি সিইও দফতরে চিঠি পাঠিয়ে এই বৈঠকের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। সেইমতোই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নেতৃত্বে কমিশনের ফুল বেঞ্চ এই বৈঠকে অংশ নেয়।
বুধবার বিকেল ৩টে থেকে শুরু হয় বৈঠক। আজ বৃহস্পতিবারও এসআইআর প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক হয়।
সূত্রের খবর, এই বৈঠকে বাংলায় ২০০২–এর সঙ্গে বর্তমান ভোটার তালিকার ম্যাচিং এবং ম্যাপিংয়ের প্রসঙ্গও উঠে আসে। রাজ্যে বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ। এর মধ্যে এসআইআরের জন্য ম্যাচিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৩ কোটি ৯৬ লক্ষ ভোটারের নাম ২০০২ ও বর্তমান ভোটার তালিক দু’টি জায়গাতেই রয়েছে। অর্থাৎ ম্যাচিংয়ের হার ৫২ শতাংশ। বিভিন্ন জেলার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই হার ৫০ শতাংশ, উত্তর ২৪ পরগনায় ৪৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭২ শতাংশ। আবার উত্তর কলকাতায় হার ৫৫.৩৫ শতাংশ। ‘সার’-এর কাজ সহজ করার জন্য বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে কমিশনের নির্দেশে রাজ্যগুলি এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিহারে এই ম্যাচিংয়ের গড় হার ৬৫ শতাংশ ছিল। কোনও কোনও জেলায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ম্যাচিং হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সেই হার যথেষ্ট কম। সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ার জন্যই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন কমিশনের আধিকারিকরা। বাংলায় এসআইআর করার ক্ষেত্রে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) নিরাপত্তার প্রসঙ্গ উঠে আসে বৈঠকে। কারণ, ইতিমধ্যেই একাধিক বিএলও স্থানীয় ভাবে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের হুমকির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কমিশনের কাছে। কলকাতার পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর, কসবার মতো এলাকা থেকেও এমন অভিযোগ আসছে। কমিশন সূত্রের খবর, এই সব এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলও–দের কাছে চাপ আসছে, আধার কার্ড নিয়ে ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় তুলে দিতে হবে। না হলে বিপদ হবে। এই বিষয়ে ভোট কর্মী ঐক্য মঞ্চ, যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের তরফে দফায় দফায় সিইও অফিসে গিয়ে বিএলও–দের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে সিইও দফতর থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী রাজ্য সফরে এসে পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার বিএলও–দের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেও বিএলওরা নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছিলেন। কমিশন চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর শুরু করতে। পাশাপাশি আর কোন কোন রাজ্যে সমীক্ষা চালু হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বুধবারের বৈঠকে। গত সপ্তাহে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ কুমার আগরওয়াল জানিয়েছিলেন, ২০০২ সালের এসআইআর অনুযায়ী যেসব ভোটারের নাম সেই সময়ের তালিকায় ছিল, তাঁদের ভোটাধিকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে যেসব বর্তমান ভোটারের নাম ২০০২ সালের তালিকায় নেই, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কমিশন নির্ধারিত নথি জমা দিতে হবে।
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রবল আপত্তির মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হতে চলেছে এসআইআর। পশ্চিমবঙ্গে শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সেই সময়কার ভোটার তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার “ম্যাপিং ও ম্যাচিং” প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। দিল্লির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর কমিশনের কাছে সেই আপডেট পেশ করেছে বলে জানা গেছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement