সপ্তর্ষি সিংহ
বাংলাজুড়ে আলোর উৎসব দীপাবলিতে সেজে উঠবে। সেই উপলক্ষে মৃৎশিল্পীদের মধ্যে চলছে তীব্র তোড়জোড়। মাস দুই ধরে প্রদীপ তৈরির কাজে এতটাই ব্যস্ত তাঁরা, যে কার্যত নাওয়া-খাওয়ার সময়ও নেই। বিগত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ভারতীয় আচার, অনুষ্ঠান, উৎসবেও। এখন মাটির প্রদীপের জায়গা নিয়েছে বৈদ্যুতিক টুনি বাল্ব এমনকি প্লাস্টিকের জল দিলেই জ্বলে ওঠছে প্রদীপ। ফলে দীপাবলির আগে প্রদীপ বানানোয় মৃৎশিল্পীদের কিছু বাড়তি রোজগার এখন প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বাজারে আধুনিক ইলেকট্রিক প্রদীপের রমরমা রয়েছে, তবু মাটির প্রদীপের চাহিদা এখনও অটুট। মন্দিরে বা বাড়িতে দীপাবলির রাতে ঐতিহ্যবাহী প্রদীপ জ্বালানোর রীতির জন্যই এই চাহিদা বলে জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। বৃষ্টির কারণে মাঝপথে কাজ ব্যাহত হলেও এখন প্রতিদিন হাজার হাজার মাটির প্রদীপ তৈরি করছেন। উল্টোডাঙ্গার দক্ষিণদাঁড়ি এলাকার এক মৃৎশিল্পী প্রতি-বছর বাহারি রকমের মাটির প্রদীপ বানিয়ে থাকেন। রং-বেরঙের এক মুখী প্রদীপের পাশাপাশি তাঁর হাতের শৈলীতে তৈরি হয় বাহারি রকম আকারের মাটির প্রদীপ। কিছু প্রদীপ তৈরি হচ্ছে হাতে, কিছু আবার মেশিনের সাহায্যে। এই বছর তুমুল বৃষ্টির কারণে মাথায় হাত পড়েছে মৃৎশিল্পীদের। একে মাটির প্রদীপের বাজার মন্দা। তার উপর আবার বৃষ্টির জেরে অন্যান্যবারের তুলনায় অনেকটাই কম সংখ্যক প্রদীপ বানিয়েছেন তাঁরা। শিল্পীরা বলেন, “এই বছর আমরা ৫০,০০০ এর মত মাটির প্রদীপ বানিয়েছি। বৃষ্টির জন্যই দীপাবলির আগে যথেষ্ট পরিমাণে প্রদীপ বানানো সম্ভব হল না”।এক মাটির প্রদীপ বিক্রেতা বলেন, “এবছর কেন্দ্র সরকারের স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের আহ্বানের পর অনেকেই মাটির প্রদীপ কেনার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। আমিও সকলকে দীপাবলিতে মাটির প্রদীপ জ্বালানোর অনুরোধ করব।”
পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও সমানভাবে যুক্ত হয়েছেন এই শিল্পে। কেউ হাতে তৈরি করছেন, কেউ মেশিনে। তাঁদের দাবি, “যতই আধুনিক প্রদীপ আসুক, মাটির প্রদীপের বিকল্প নেই।” এই শিল্পের মাধ্যমে অনেক মহিলা স্বনির্ভর হচ্ছেন। সারা বছর প্রদীপ তৈরি হলেও দীপাবলির আগে চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। ফলে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করে চলেছেন তাঁরাও। মাটির প্রদীপ কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, “আমাদের যতটা সম্ভব পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে দীপাবলি উদযাপন করা উচিৎ। মৃৎশিল্পীদের জন্য দীপাবলি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি উৎসব। ওনারা দীপাবলির অনেক আগে থেকেই মাটির প্রদীপ বানানো শুরু করে থাকেন। দিনরাত জেগে ওনারা কাজ করেন। আমাদের উচিৎ ওনাদের পাশে দাঁড়ানো। আমি আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধবদেরকেও মাটির প্রদীপ কিনতে বলি।”