বেবি চক্রবর্ত্তী
“মা” শব্দে মন শুদ্ধ হয়। হৃদয়ের বিকশিত সীমিত ভাবনায় জ্ঞানের অধ্যায়নে কালিকা বন্দনা কালী কালহরাং দেবীং ক্রীং- কার বীজরূপিনীম্। কামরূপাং কলাতীতাং কালিকাং দক্ষিণাং ভজে … হে কালী, কাল শক্তি নিয়ন্ত্রণকারিণী, ক্রী-কার বীজরূপিণী- কামরূপা- সমস্ত কলার অতীত স্বরূপা দক্ষিণরূপিণী মা কালিকা হল সর্বসিদ্ধিপ্রদা।
৪০০ বছরের ইতিহাস আজও বয়ে নিয়ে চলেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘী ব্লকের ডুমরাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস সিংহের পরিবার। এই পূজা বিহারের জমিদার প্রীতিচাঁদের কালী পূজা এখনও ভক্তি সহকারে পূজা করছে দেবাশিসের পরিবার। দিপাবলীর পরের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূজাকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ মানুষ পূজা দিতে হাজির হন একশোরও বেশি। পাশাপাশি বিশেষ আচারবিধি মেনে মায়ের পুজোর পায়েরা ও পাঠা বলি হয়। কথিত আছে প্রায় চারশো বছর আগে বিহার রাজ্যের পূর্ণিয়া জেলার বাসিন্দা প্রীতিচাদঁ জমিদার এলাকার মানুষকে উৎসব মুখর করে তুলতে জুঝারপুরীয়ানি কালী মায়ের পূজো শুরু করেছিলেন। বিহার থেকে ডুমরাডাঙ্গী বাংলায় এসেছে। জমিদারি প্রথা কালের নিয়মে অনেকদিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। জমিদারের পূজার দায়িত্ব সামলাতেন ললকেশ্বর সিংহ । জমিদার প্রীতিচাঁদের মৃত্যু হবার পরই সেই পূজোর ললকেশ্বর সিংহ নিজের কাধে তুলে নেন। ললকেশ্বর ডুমরাডাঙ্গী এলাকার একজন ভালো বিচারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বেঁচে থাকতেই পূজোর দায়িত্বভার তাঁর জামাই কাঠুলাল সিংহ কে দিয়ে যান। সেই পরিবারই দীর্ঘদিন ধরে পুজো করছেন। তার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সুশীল সিংহ গত ৫১ বছর ধরে নিজে নির্মাণ ও পূজো করতেন। গত তিন বছর আগে সুশীল সিংহ মারা যান গত তিন বছর থেকে তার তিন ছেলে সামলাছেন দেবাশিস সিংহ, পলাশ সিংহ ও আশুতোষ সিংহ সেই কালীপূজা। মাঝে আর একদিন বাকি। পূজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।কথিত আছে মাকালীর কাছে ভক্তরা যা মানত করে সেই মনস কামনা পূর্ণ করে জুঝারপুরীয়ানি কালী মা । তাই পূজায় বিহার, সহ বাংলার একাধিক জেলার মানুষ এই পূজায় অংশ নেন যেমন – উত্তর দিনাজপুর , বালুরঘাট, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, মালদা, কলকাতা সহ বিহার রাজ্যে থেকে । এই পূজো নিয়ে আশুতোষ সিংহ বলেন মহালয়ার পরের দিন থেকে ঠাকুর নির্মাণের কাজ শুরু হয় ডুমরাডাঙ্গী গ্রামে নিজেরাই নির্মাণ করেন এবং দিপাবলীর দিন সম্পন্ন হয় ।

দিপাবলীর দিন সারারাত ধরে ডুমরাডাঙ্গী গ্রামে মায়ের সন্ধ্যা পূজোর সাথেই চলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং ওই দিন ভোর বেলা ডুমরাডাঙ্গী গ্রাম থেকে জুঝারপুর থানে রাখতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভীড় করেন। জুঝারপুর পৌঁছানোর পর পূজো দিতে সারাদিন ভক্তদের ভীড় থাকে পথা মেনে ওই দিন সন্ধ্যার পর কালি মায়ের বিসর্জন করা হয়।