স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)
আমাদের সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। দুর্গাপূজার পরেই ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালির প্রধান লক্ষ্মীপূজা কোজাগরী পূর্ণিমায় ৷ উত্তর ও পশ্চিম ভারতে দেওয়ালির আগের দিন ধনতেরাসে। কোজাগরী ছাড়াও পৌষ, ভাদ্র, চৈত্র সংক্রান্তি ও দীপাবলিতে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। তবে “বারোমাসের পাঁচালি” ও “বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা” তে আমরা অনেক লৌকিক কাহিনীর কথা জানতে পারি। কোজাগরী পূর্ণিমার রাত পেঁচার মত জেগে কাটাতে হয়। ঐ রাতে মা ভক্তের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে খোঁজ নিয়ে তাঁদের আর্শীবাদ করেন। আসলে সম্পদ রক্ষা করতে হয় সন্তপর্ণে। যাকে আমরা বলি জেগে থাকা। জাগরনে লক্ষ্মীর কৃপা, নইলে কেন জাগে কোজাগরে৷ বাঙালির ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পূজা৷ যিনি ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ দেন। তাঁর হাতে ধান ধনের প্রতীক, দুর্বা অমরত্বের প্রতীক, মায়ের বাহন লক্ষ্মীপেঁচা গোপনীয়তার প্রতীক, ধনদৌলত গোপনে রাখতে না পারলে শত্রু বাড়ে, পেঁচা আঁধার ভেদ করতে পারে৷ মানে সম্পত্তি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে৷ জলপূর্ণ ঘটে আম পল্লবসহ পুজো করলে এবং সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে সধবারা ব্রত করলে দেবী খুশী হন৷ পরিবারে শান্তি, সুখ-সমৃদ্ধি, সন্তান সুখ, সুফসল ও জ্ঞান দান করেন ৷কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার মূল তাৎপর্য হলো ধন, সম্পত্তি ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা। যিনি এই রাতে মর্ত্যে আসেন এবং জেগে থাকা ভক্তদের আশীর্বাদ করেন। “কোজাগরী” শব্দটি “কো জাগতি” থেকে এসেছে, যার অর্থ “কে জেগে আছো”? এই রাতে যারা রাত জেগে দেবীর আরাধনা করেন, তারা দেবীর বিশেষ কৃপা লাভ করেন। বিশ্বাস করা হয় যে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে দেবী লক্ষ্মী মর্ত্যে আসেন এবং ভক্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখেন তারা জেগে আছেন কিনা। যারা রাত জেগে দেবীর আরাধনা করেন, তারা দেবীর আশীর্বাদ লাভ করেন। এই জেগে থাকার মাধ্যমে ভক্তরা পার্থিব ও অপার্থিব ধন-সম্পদ প্রাপ্তির আশা রাখেন। এই পূজা প্রধানত ধন, যশ, খ্যাতি সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য করা হয়। পরিবারে সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য বজায় রাখার জন্য কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা করা হয়, কারণ লক্ষ্মী দেবীর অংশ হিসেবে পরিবারে মায়েদের দেখা হয়। আমাদের বিশ্বাস আশ্বিনের এই শারদ পূর্ণিমা তিথির রাত বছরের সবচেয়ে উজ্বল রাত। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা ও সমৃদ্ধির প্রতীক। প্রাচুর্য, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্ণী কোজাগরী পূর্ণিমার এই রাতে বিষ্ণুলোক বা বৈকুন্ঠ থেকে পৃথিবীতে নেমে এসে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কে জেগে আছো এই প্রশ্ন করেন? তাই ভক্তরা রাত জেগে করেন দেবীর আরাধনা। ধানের শীষ, কাঁচাসুপারি, কলাপাতা ও আলপনা,ক্ষীর, নারকেল এসব পূজার উপাচার হিসাবে ব্যবহার হয়। শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর এক হাতে পদ্ম আর অন্য হাতে অমৃত কলসী। আবার কখনো তিনি চতুর্ভুজা। তখন ডান দিকের উপরের হাতে পাশ ও নিচের হাতে অক্ষমালা এবং বাঁ দিকের উপর হাতে পদ্ম ও নিচের হাতে অঙ্কুশধারিণী দেখি। মালক্ষ্মীর বাহন পেঁচা ধন পাহারা দেয়৷ মা লক্ষ্মী ভক্তের বাড়ীতে গৃহলক্ষ্মী, রাজার বাড়ীতে রাজলক্ষ্মী ও স্বর্গে তিনিই শ্রী বা স্বর্গলক্ষ্মী, তিনি দশ মহাবিদ্যার দশম “কমলা”। তাই , আমরা মা কে আহ্বান করি। পঞ্জিকা অনুযায়ী কোজাগরী পূর্ণিমা আগামী সোমবার ৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর সকাল ১১টা ২৪ মিনিট থেকে পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে। ছেড়ে যাবে ৭ অক্টোবর সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটে। সম্পদ ও সমৃদ্ধি, শ্রী ও ঐশ্বর্যের দেবী শ্রী শ্রী লক্ষী মাতা সবাইকে কৃপা করুন৷ ধনদৌলত, এবং ঐশ্বর্যে সকলের সংসার পূর্ণ কর মা।