আরজি কর কাণ্ডে এবার আদালতের নজর তদন্তকারী আধিকারিকদের ওপর। তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে কলকাতা পুলিশের চার অফিসারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিল শিয়ালদহ আদালত। গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে জমা দেওয়া স্ট্যাটাস রিপোর্টের সময় আরজি করের নির্যাতিতাদের মা-বাবার আইনজীবীরা ওই চার পুলিশকর্মীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেই দিনই অভিযোগ ওঠে আদালত চত্বরে তদন্তকারী অফিসার সীমা পাহুজা ও সিবিআইয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবার খারাপ আচরণ করেছিল। এই ঘটনার পরই শিয়ালদহ আদালত লালবাজারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে ওই পুলিশ আধিকারিকদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।
পাশাপাশি আদালত স্পষ্ট করে এও জানিয়েছে, চার পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, তা ভাল করে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে লালবাজারকে। পাশাপাশি সিবিআইকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ ও চিকিৎসকদের ভূমিকা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখেন। আরজি কর কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আদালত বলে দিয়েছে, তার সাজা হওয়া মানে সমস্যা এখানেই শেষ, এমনটা নয়। কারণ এখনও আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সিবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জশিট দাখিল করেনি এবং বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকটাও বিচারাধীন। সব মিলিয়ে আগামী ১৪ নভেম্বর বিস্তারিত স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে নিজের মেয়েকে ঠিক কোথায় ধর্ষণ করে খুন করে হয়েছিল, তা জানতে ঘটনাস্থল বা ক্রাইম সিন দেখতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে দেখা গিয়েছে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মাকে। তবে হাইকোর্ট জানতে চায়, কী কারণে ‘ক্রাইম সিনে’ যেতে চাইছেন নির্যাতিতার পরিবার। এর আগে একই দাবিতে এক বার কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তবে সেবার হাইকোর্ট থেকে তাঁদের নিম্ন আদালত অর্থাৎ শিয়ালদহ আদালতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও লাভ না হওয়ায় ফের তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টেই আবেদন জানান। এদিকে সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশ এই দুই পক্ষের তদন্ত নিয়েই ক্ষোভ রয়েছে নির্যাতিতার পরিবারের। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা নিজেরাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে চেয়েছেন। শিয়ালদহ আদালতে এই মামলার শুনানির সময়ে কার্যত ভর্ৎসিত হয় সিবিআই। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নিজের তদন্তদের ওপরই ভরসা নেই। আসলে নির্যাতিতার পরিবারের দাবি মেনে নিয়েছিল সিবিআই। সেই প্রেক্ষিতেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অরিজিৎ মণ্ডল।