মৎস্যজীবীরা মূলত জীবিকা নির্বাহের জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া, এবং মধু সংগ্রহ করতে যান। এই অঞ্চলে তাদের অন্য কোনো বিকল্প আয়ের উৎস খুব কম বা নেই বললেই চলে। জীবিকা ও আর্থিক নির্ভরতা: সুন্দরবনের নদী, খাঁড়ি, এবং জঙ্গল থেকে সংগৃহীত মাছ, কাঁকড়া, এবং মধু স্থানীয় দরিদ্র মানুষের প্রধান আয়ের উৎস। বংশ পরম্পরায় এই কাজ করেই তারা সংসার চালান। কৃষি কাজ লোনা জলের কারণে এখানে সেভাবে সম্ভব নয়। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং এর জলভাগ নানা প্রকারের মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও মূল্যবান খলিসা ফুলের মধুর ভান্ডার। এখানকার মানুষ, যারা “মৌয়াল” নামে পরিচিত, বন বিভাগের বৈধ অনুমতি (পাস) নিয়ে মূলত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করেন।এই অঞ্চলে বেকারত্ব অনেক বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে বা অন্য কোনোভাবে পর্যাপ্ত বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায়, নিষেধাজ্ঞা বা বিপদের তোয়াক্কা না করেই তাদের জঙ্গলে প্রবেশ করতে হয়।অনেক জেলে মহাজন বা বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে থাকেন। সেই ঋণ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেশি পরিমাণে মাছ-কাঁকড়া সংগ্রহ করা তাদের কাছে বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।বহু পরিবার প্রজন্ম ধরে এই কাজের সাথে যুক্ত। তাদের পেশাগত দক্ষতা এবং জীবনধারা সুন্দরবনের বনের সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের মৎস্যজীবী ও মৌয়ালদের জঙ্গলে প্রবেশের মূল কারণ হলো দারিদ্র্য, বিকল্প কাজের অভাব এবং বংশগত পেশার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা। তাদের এই জীবনযাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে পদে পদে বাঘ ও কুমিরের আক্রমণের ভয় থাকে। সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ কাকড়া ও মধু ধরতে গিয়ে এই পর্যন্ত দুই শতাধিকের অধিক মৎস্যজীবী বাঘের আক্রমণে নিহত ও আহত হয়েছেন তারপরেও মৎস্যজীবীরা জঙ্গলমুখী।