বেনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৩ সালে প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। এই রায় ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখে কি না তা নিয়ে চর্চা কম হচ্ছে না। সোমবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন এই মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। প্রাথমিকের চাকরিহারার সংখ্যা কমাতে এবার এদিনের শুনানিতে নতুন পথের সন্ধান দিলেন চাকরি প্রার্থীরা।
এদিন মামলাকারীর তরফে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার বলেন, ‘চাকরি বাতিল হওয়া ৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষককেই অ্যাপটিটিউড টেস্টের জন্য ৫ নম্বর দেওয়া হোক অথবা সবার অ্যাপটিটিউড টেস্টের নম্বর শূন্য করে দেওয়া হোক।’ এর পাশাপাশি আদালতে তাঁর আর্জি, পুনর্গঠন করে নতুন প্যানেল তৈরি করা হোক। তাঁর যুক্তি, এর ফলে অনেক কম সংখ্যক শিক্ষককে চাকরি হারাতে হবে।
এরই প্রেক্ষিতে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, সেটা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে। কারণ, যারা প্রশিক্ষিত রয়েছেন, তাঁদের কী হবে এ প্রশ্নও করে বিচারপতি। উত্তরে মামলাকারীর তরফে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার বলেন, ‘তাঁরা প্রশিক্ষিত হওয়ার কারণে এমনিতেই ১৫ নম্বর বেশি পেয়ে থাকেন। ফলে তাদের অসুবিধা হবে না।’ পাশাপাশি আইনজীবী এও বলেন, ‘নথি দিয়ে দেখাতে পারি যে আমার মক্কেলের থেকে কম নম্বর পেয়ে কমপক্ষে ৬৫৯ জন চাকরি করছেন।’ ২২ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এর আগে এই মামলা যখন সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারাধীন ছিল। ২০২৩ সালের মে মাসের ১২ তারিখ ওই মামলায় হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশে দিয়েছিলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার ৪২৫০০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল করা হয়। কিন্তু তিনি এও নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে রাজ্যকে। সেখানে যোগ্য এবং উত্তীর্ণদের চাকরি বহাল থাকবে। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পর্ষদ যায় ডিভিশন বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চও স্পষ্ট করে দেয়, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মতো নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্ষদকে শুরু করতে হবে।
এরপর সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য ও পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন মামলাকারীরাও। তখন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টা না শুনে হাইকোর্টের নির্দিষ্ট বেঞ্চেই মামলা পাঠায়। তখন মামলাকারীদের তরফে অন্য আইনজীবী জানিয়েছিলেন, যখন নিয়োগ হয়েছিল, তখন কেবল ১০ হাজার জনের প্রশিক্ষণ ছিল। বাকিরা ছিলেন অপ্রশিক্ষিত। পরে প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে দুর্নীতির কারণে চাকরি বাতিল হয়। চাকরিপ্রার্থীদের তরফে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আগে সওয়াল করা হয়, সরকারি নীতি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিলের সময়সীমা মেনেই সময়ের তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও তাঁর চাকরি বাতিল করা হয়। এবার এই ‘অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত’ ৩২ হাজার চাকরি কীভাবে বাঁচানো যায়, তার পথ বাতলাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরাই।